বেঁচে উঠলো বজ্রঘাতে মৃত কিশোর

২০২০ সালের জুলাই মাস। বাড়ির লোকের সঙ্গে ফ্লরিডার সিয়েস্তা কি সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিল ১৫ বছর বয়সি জেকব ব্রিউয়ার। তখনই আচমকা আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তড়িঘড়ি নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে সৈকত ছেড়ে ফিরে যাচ্ছিল তারা। তার মধ্যেই বিপত্তি। বাজ পড়ে কাছেই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জেকবের মা দেখেন, অচৈতন্য হয়ে পড়েছে জেকব।

বুকের কাছে বেশ কিছুটা অংশ হয়ে গিয়েছে লাল। তড়িঘড়ি লোকজন ছুটে আসেন। চাওয়া হয় প্রশাসনের সাহায্যও।

জেকবের বোন জানায়, বজ্রপাত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেকবের মুখ থেকে গ্যাঁজা বেরোতে শুরু করে, চোখের রংও লালাভ হয়ে আসে। মিনিট পনেরোর মধ্যে চলে আসে নিশ্চয়যান। চিকিত্‍সাকর্মীরা জানান, হৃদ্‌স্পন্দন পাচ্ছেন না তাঁরা। নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিত্‍সকেরা জানান, সম্ভবত 'ব্রেন ডেড' হয়ে গিয়েছে জেকব। কিন্তু বাবা-মা মেনে নিতে পারেননি এই সংবাদ। আকাশপথে তত্‍ক্ষণাত্‍ তাঁকে ট্যাম্পা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে যান ছেলেকে। সেখানে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় জেকবকে। তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুস কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জল জমে যাচ্ছিল দেহে। সেই জল বার করতে হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশ কেটে দেন চিকিত্‍সকেরা। প্রায় দু'সপ্তাহ আইসিইউতে থাকার পর তাকে টেক্সাসের একটি শিশুদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

ক্রমশ আরও অবনতি হতে থাকে স্বাস্থ্যের। মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দেয়, হয় স্ট্রোকও। বিভিন্ন স্নায়ু অকেজো হয়ে পড়ে। নিয়ে যাওয়া হয় শিকাগো হাসপাতালে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মৃত্যুর কাছে হেরে যায়নি জেকব। ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে সে। কিন্তু শরীর কিছুটা সামাল দিলেও পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে শরীর। মল-মূত্রের উপরেও ছিল না কোনও নিয়ন্ত্রণ। শুরু হয় নতুন লড়াই। 'সাইবারডাইন হ্যাল' বলে একটি নতুন পদ্ধতিতে চিকিত্‍সা শুরু হয় তার। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ধরনের রোবট মস্তিষ্কের সামান্যতম বৈদ্যুতিক সঙ্কেতও ধরে নিতে পারে। তার পর সেই সঙ্কেত অনুসারে শুরু করে কাজ রোবট। গোটা আমেরিকায় এই যন্ত্র রয়েছে কেবল একটিই। সঙ্গে শুরু হয় ফিজিয়োথেরাপিও। দুই থেরাপির গুণে অনেকটাই সেরে উঠেছে জেকব। নাড়তে পারছে হাত-পা। তবে এখনও নিজের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে না জেকব। পরিবারের আশা, এত বিপদ যখন জয় করে আসতে পেরেছে, তখন নিজের পায়েই নিশ্চয়ই এক দিন দাঁড়াতে পারবে জেকব।

Post a Comment

0 Comments