তাদের মতে, ২০২৩ সালে রাজ্যে এরোসল দূষণ ৮% বৃদ্ধি পাবে। যা এরোসল দূষণের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাত্ রেড জোনে ঢুকে পড়বে। দেশে এরোসল দূষণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করবে বিহারের পর। PM2.5 এবং PM10 এর পাশাপাশি সমুদ্রের লবণ, ধুলো, জৈব কার্বন দিয়ে তৈরি হয় এরোসল। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। Aerosol optical depth(AOD) হল বাতাসে এরোসিল কত পরিমানে আছে তা জানার পদ্ধতি।
কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডক্টর অভিজিত্ চট্টোপাধ্যায় এবং গবেষক মনামী দত্তের A deep insight into state-level Aerosol pollution in India শীর্ষক গবেষণাপত্রে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের এরোসল দূষণ নিয়ে ভবিষ্যতের কি হতে চলেছে তা বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যেই রেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। যার অর্থ AOD এর মাত্রা ০.৫। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এরোসল পলিউশনের মাত্রা পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩ এর মধ্যে ৮% বৃদ্ধি পাবে। যা AOD তে দাঁড়াবে 0.75 শতাংশ। এরোসল অপটিক্যাল ডেপ্থ বা AOD এর মাত্রা যদি শূন্য থেকে একের মধ্যে থাকে তাহলে স্বচ্ছ পরিষ্কার আকাশ দেখা যায়। আর যদি একের বেশি হয় তাহলে আকাশ ঘোলাটে হয়। ➢ Division of categories for AODBased on these percentiles, there are 4 different colour zones-● Green (Safe Zone)- AOD value less than 0.3● Blue (Less Vulnerable Zone)- AOD value between 0.3-0.4● Orange (Vulnerable zone)- AOD value between 0.4-0.5● Red (Highly Vulnerable zone)- AOD value greater than 0.5 "অবস্থানগত কারণের জন্য গাঙ্গেয় সমতল ভূমি দূষণ এসে পৌঁছায় পশ্চিমবঙ্গের ওপর। এর পাশাপাশি স্থানীয় দূষণ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বায়ু দূষণের মাপকাঠিতে হয়ে উঠেছে দূষিত রাজ্য।" বক্তব্য এই গবেষণা পত্রের প্রধান গবেষক ডঃ অভিজিত্ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্য। এরপর দূষণের মাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলে তা রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভাবে হানিকারক হয়ে উঠবে।"
পশ্চিমবঙ্গের এরোসল দূষণের প্রধান উত্স গুলো কি? অন্যতম গবেষক মনামী দত্ত জানাচ্ছেন, " ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যের এরোসল পলিউশনের প্রধান উত্স ছিল যানবাহন থেকে তৈরি হওয়া দূষণ, যা মোট দূষণের ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে যানবাহন চলার ফলে তৈরি হওয়া ধুলো। তার পরিমাণ প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। তারপর অবস্থান করছে চিরাচরিত জ্বালানি পদ্ধতি। যা মোট দূষণের ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ। মনামী দত্ত বলেন, "জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক গুলোর ঠিকমতো পরিচর্যা না হওয়া এবং কাঁচা রাস্তা থেকে মূলত গাড়ি ঘোড়া চলার ফলে তৈরি হওয়া ধুলোর প্রধান উত্স।"
যদিও ২০১৫ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে চিরাচরিত জ্বালানি পদ্ধতি তৈরি হওয়া দূষণের মাত্রা বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। উল্টো দিকে যানবাহনের দূষণ কমে ১৮% হয়েছে। কারণ হিসেবে মনামী দত্ত বলেন, "যানবাহন থেকে তৈরি হওয়া দূষণ কমার প্রধান কারণ হতে পারে EURO-IV গাড়ি রাস্তায় নামানো এবং পুরনো ইঞ্জিনের গাড়িগুলোকে আপগ্রেড করা। একই সঙ্গে ১৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি চলাচল নিরপরা নিষেধাজ্ঞা জারি করা বড় কারণ। যানবাহন চলার ফলে রাস্তায় তৈরি হওয়ার ধুলোর পরিবর্তে বাড়িঘর তৈরি হওয়া সময় যে ধুলো তৈরি হচ্ছে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শহরগুলির রাস্তার পাশের বেআইনিভাবে তৈরি হওয়া খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্টে চিরাচরিত জ্বালানি আধিক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
গবেষণাপত্রে পশ্চিমবঙ্গের এরোসল দূষণের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। ডক্টর চ্যাটার্জি বলেন, চিরাচরিত জ্বালানির পদ্ধতি থেকে তৈরি হওয়া দূষণ এরোসেল দূষণের প্রধান কারণ। সম্প্রতি এলপিজি দাম বৃদ্ধির ফলে গরিব মানুষেরা আবার চিরাচরিত কাঠ, কয়লা দিয়ে রান্নার পদ্ধতিতে ফিরে গেছে। পাশাপাশি রাস্তার ধারে খাবারের দোকানগুলির সংখ্যাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি মনামী দত্ত বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যে হারে নগর উন্নয়ন হচ্ছে তাতে নির্মাণ কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্মাণ কাজের সময় যে ধুলো তৈরি হয় তা ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া এখনই প্রয়োজন।
0 Comments