সহযোগিতা' চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার মন্ত্রীসভার সদস্যরা।

কেন্দ্রের বঞ্চনা' র জন্য রাজ্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলাই তৃণমূলের কৌশল? ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে একাধীক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আটকে থাকা টাকা উদ্ধারে রাজ্য বিজেপির কাছেই ' সহযোগিতা' চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার মন্ত্রীসভার সদস্যরা।

শাসক দলের এই মনোভাবে 'কৌশল' দেখছে বিজেপি।

শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। নির্বাচনের আগে,একাধীক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রয়ছে কেন্দ্রের কাছে। পঞ্চায়েতের অধীন ১০০ দিনের কাজের মত প্রকল্পের টাকা প্রায় ১ বছর ধরে বকেয়া রয়ছে বলে দাবি রাজ্যের। সেই বকেয়া অর্থ পেতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু, দিল্লি হাত উপুড় করেনি।

শেষমেশ, সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকের পর নানা শর্ত চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোযনায় ৫৮৪ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষনা করে কেন্দ্র। জল জীবন মিশনের মত পূর্ত দপ্তরের প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ মিলছে গঙ্গা ভাঙন নিয়ে বিজেপির অভিযোগের সঙ্গে সহমত হয়ে, রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থে ফারাক্কা বাঁধের সম্প্রসারনে কেন্দ্রকে রাজি করাতে বিজেপির বিধায়কদের সহযোগিতা চান। এই পরিসরে আজ বিধানসভায় রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে সারের যোগান কম থাকার জন্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সার না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন সারের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কেন্দ্র মাত্র ৭৭ হাজার মেট্রিক টন সার পাঠিয়েছে। ১০০ দিনের বকেয়া অর্থ ও রাজ্যে আসন্ন চাষের মরশুমের জন্য প্রয়োজনীয় এই সার পেতে, রাজ্যের মানুষের স্বার্থে,কেন্দ্রের কাছে দরবার করতে বিজেপি বিধায়কদের অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রীদের এই ' সহযোগিতা'র আর্জিতে কৌশল দেখছে বিজেপি।

মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুরোধের জবাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, " আমরা রাজ্যের কোন টাকা আটকে রাখতে চাই না। জল জীবন মিশনের টাকায় জলের পাইপ কেনা ও ফেরুলে দূ্র্নীতি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকায় জব কার্ড ও মাস্টার রোলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এখন 'কাটমানি সরকার' বিপদে পড়েছে বলে তাকে বাঁচানোর দায় আমরা নিতে পারি না। নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে আমরা রাজ্যের বকেয়া টাকার জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করতে প্রস্তুত। "

যদিও, বিরোধী দলনেতার এই দাবির সঙ্গে সহমত নয় তৃণমূল। প্রবীন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় আজ রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে সারের যোগানে ঘাটতির পেছনে সরসরি রাজনীতি দেখছেন। শোভনদেবের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে, কৃষকদের সমস্যা তৈরি করতেই সার দিচ্ছে না কেন্দ্র। তিনি আরো বলেন, কখনো শুনেছেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র? এতে শোভনদেবের খাওয়া জুটবে না তা নয়, রাজ্যের কৃষকরাই মার খাবে। কৃষকদের হাতে না মেরে ভাতে মারার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। যাতে, কৃষকরা ক্ষেপে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। "

যদিও, বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মতে, আসলে এটা তৃণমূলের কৌশল। রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই পঞ্চায়েতে বিজেপির বিরুদ্ধে এই প্রচারকে সামনে আনতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের মানুষ জানে তৃণমূলের দূর্নীতির কথা। তৃণমূলের এই প্রচার তাই কোন কাজে আসবে না।

রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের গ্রামীণ মানুষের সমর্থন বা বিরোধিতার প্রশ্নে সারের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ দিনের কাজ বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা না মেলায় গ্রামের গরীব মানুষই সরসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেক্ষেত্রে, সাংগঠনিক দিক দিয়ে রাজ্য বিজেপির চেয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী তৃণমূলের পক্ষে এই প্রচারকে হাতিয়ার করে মানুষের সহানুভূতি অর্জন করা অনেক সহজ।

Post a Comment

0 Comments