প্রধানত লাইটরক ইন্ডিয়ার সৌজন্যে বিটও ৩৩ মিলিয়ন ডলারের তহবিল পেল; রাউন্ডে যোগ দিল হেলথকোয়াড ও ফ্লিপকার্ট ভেঞ্চার্স



ডিজিটাল; ১৭ নভেম্বর: গৌতম চোপড়া, যশ সেহগল ও কুণাল কিনালেঙ্কর প্রতিষ্ঠিত ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর সার্বিক ডিজিটাল পরিচর্যা প্ল্যাটফর্ম বিটও ৩৩ মিলিয়ন ডলার সিরিজ বি ফান্ডিং পেতে সক্ষম হয়েছে। প্রধান ফান্ডিং করেছে লাইটরক ইন্ডিয়া এবং অংশগ্রহণ করেছে হেলথকোয়াড, ফ্লিপকার্ট ভেঞ্চার্স এবং অন্যান্য বর্তমান লগ্নিকারীরা।

ভারত শিগগির চীনকে অতিক্রম করে বিশ্বের ডায়বেটিস রাজধানী হয়ে উঠবে। ২০০ মিলিয়নের বেশি ভারতীয়ের ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে বিলম্বে রোগনির্ণয়। এক বড় অংশের মানুষের ডায়বেটিস ধরা পড়ে পরিস্থিতি বেশ গুরুতর হয়ে যাওয়ার পর।

বিশেষ করে টিয়ার ২ শহরগুলো এবং তার চেয়েও দূরবর্তী অঞ্চলে এক ভেঙে পড়া ইকোসিস্টেম এবং এই রোগের চিকিৎসা করতে পারেন এমন বিশেষজ্ঞের অভাবে আমাদের দেশের এক বড় অংশের মানুষ হয় খুব সামান্য ধারাবাহিক ডায়বেটিস পরিচর্যার নাগাল পান অথবা আদৌ পান না। ফলে ডায়বেটিকদের ৮০% রক্তে গ্লুকোজের অনিয়ন্ত্রিত মাত্রা নিয়ে বাস করেন। উপরন্তু উন্নত বাজারগুলোতে যা হয়ে থাকে তার বদলে এখানে ডায়বেটিসে আক্রান্ত মানুষের বেশিরভাগ খরচ নিজের পকেট থেকেই হয়। প্রায় কোনো বিমা প্রোডাক্টই এমনকি তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খরচও দেয় না।

ভাল গুণমানের এবং অবিরাম পরিচর্যার সীমিত নাগাল পাওয়া লক্ষ লক্ষ ডায়বেটিস রোগীর কাছে সাধ্যের মধ্যে সার্বিক এবং রোগীকেন্দ্রিক ডিজিটাল সমাধান পৌঁছে দিয়ে বিটও ইকোসিস্টেমের এক গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক পূরণ করছে। বিটও ডায়বেটিস পরিচর্যার বাজার আরও বড় করছে। তাদের ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশের বেশি আসছে টিয়ার ২ শহরগুলো এবং আরও দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এবং ৫৫% ব্যবহারকারী এর আগে কখনো কোনো ব্লাড গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করেননি। এই মুহূর্তে ১৫ লক্ষ সদস্যকে পরিষেবা দেওয়া এই কোম্পানি গত এক বছরে ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দ্রুত বাজারের নেতৃস্থানীয় হয়ে উঠে ভারতের ডায়বেটিস পরিচর্যার ইকোসিস্টেমে পরিবর্তন আনতে চলেছে। পরিচর্যা এবং বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিটও বিমা ও ফার্মাসিউটিকাল ক্ষেত্রের বড় বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে কৌশলগত জুটি বাঁধতেও শুরু করেছে, যাতে দেশজুড়ে বড় মাপের প্রভাব ফেলা যায়।

বিটও-র বাস্তব জগতের প্রমাণভিত্তিক সমীক্ষা আমেরিকান ডায়বেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA), ইন্টারন্যাশনাল ডায়বেটিস ফেডারেশনের (IDF) এবং অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট ফর ডায়বেটিসের (ATTD) মত মর্যাদাপূর্ণ বিশ্বখ্যাত ফোরামে প্রকাশিত হয়েছে। এই সমীক্ষাগুলি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার উপর চালানো সমীক্ষার মধ্যে পড়ে। এই সমীক্ষাগুলি থেকে বিশেষভাবে বোঝা যায় বিটও-র বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ এবং ডায়বেটিসের ধরনের মধ্যে হাইপারগ্লাইসিমিয়া, হাইপোগ্লাইসিমিয়া, ওজন হ্রাসের মত সমস্যার জোরালো ক্লিনিকাল ফলাফল দেওয়া এবং ডিজিটাল ডায়বেটিস পরিচর্যা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে একজন গড় বিটও ব্যবহারকারীর eHbA1c ৯০ দিনের মধ্যে ১.৮% কমে যায়।

নতুন ফান্ডিং সম্পর্কে গৌতম চোপড়া, কো-ফাউন্ডার এবং সিইও – বিটও বললেন “আমাদের ডিজিটাল ফার্স্ট সমাধানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের পরিচর্যা কীভাবে চলবে তার নতুন মানদণ্ড তৈরি করছে বিটও। আমাদের এই যাত্রায় এমন সঙ্গীদের পেয়েছি যাদের সঙ্গে আমাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য দারুণভাবে মেলে এবং যাদের সক্ষমতাগুলো আমাদের লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করবে। এই সঙ্গীদের পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”

তেজস্বী রবি, যিনি লাইটরক ইন্ডিয়ার স্বাস্থ্য পরিচর্যা লগ্নির শীর্ষে আছেন, বললেন “ভারতে ডায়বেটিসের পরিচর্যা যেভাবে করা হয় বিটও তার ধারা বদলে ফেলার জন্য এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য ধার্য করেছে। ওরা একটা বিশ্বমানের টিম, যারা ধারাবাহিক, উচ্চমানের এবং সংবেদনশীল পরিচর্যা দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে। সেই পরিচর্যার ক্লিনিকাল ফলাফল অসাধারণ।”

এই নতুন তহবিল ব্যবহার করা হবে বিটও-র ডায়বেটিস পরিচর্যা প্রকল্প সারা ভারতে ছড়িয়ে দিতে, লিডারশিপ টিমকে আরও শক্তিশালী করতে এবং বিটও-র প্রোডাক্ট এবং প্রযুক্তিতে আরও বিনিয়োগ করতে। এছাড়াও বিটও তার প্রকল্পগুলির জন্য প্রমাণভিত্তিক পরিচর্যা তৈরি করতে থাকবে এবং সারা বিশ্বে ডায়বেটিসের পরিচর্যার মানদণ্ড তৈরি করবে। বিটও-র লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন রোগীকে পরিষেবা দেওয়া, যা তাকে ভারতের সবচেয়ে বড় ডায়বেটিস কেয়ার কোম্পানি করে তুলবে।
অজয় মহীপাল, ডিরেক্টর, হেলথকোয়াড বললেন “বিটও-র ডায়বেটিসের পরিচর্যার উপর ফোকাস করে তৈরি ফুল-স্ট্যাক ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যাটফর্ম কার্যপদ্ধতি নাগাল, সাধ্য এবং গুণমানের সমস্যা মেটায়। ক্লিনিকাল ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তৈরি কেয়ার প্রোগ্রামের ডিভাইস-ফার্স্ট আদানপ্রদানের লক্ষ্য ডায়বেটিসের এমন পরিচর্যা করা যা দীর্ঘদিন চালানো যায়। বিটও মনিটরিং, নিয়ন্ত্রণ এবং কমানো – সবরকম পরিচর্যাই দিচ্ছে। যেসব উদ্ভাবনীমূলক সংস্থা ভাল গুণমানের পরিচর্যা জোগাচ্ছে তাদের সঙ্গে জুটি বাঁধতে আমরা দায়বদ্ধ।”
তাঁদের লগ্নি সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবি আয়ার, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড – কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট, ফ্লিপকার্ট ভেঞ্চার্স বললেন “বিটও-তে এই লগ্নির মাধ্যমে ফ্লিপকার্ট ভেঞ্চার্স এমন ব্যবসার প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করল যে ব্যবসা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্ভাবনের কাজ করছে এবং ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেমকে বদলে দিচ্ছে। সার্বিক, ব্যতিক্রমী এবং সাধ্যের মধ্যে থাকা ডিজিটাল কেয়ার সলিউশনের মাধ্যমে বিটও ভারতের ক্রমবর্ধমান ডায়বেটিস মহামারী সামলানোর উপযুক্ত অবস্থায় আছে।”

কোম্পানির বর্তমান মার্কি লগ্নিকারীদের মধ্যে রয়েছে ওরিওস ভেঞ্চার পার্টনার্স, লিও ক্যাপিটাল, ডব্লিউ ওয়েলথ ভেঞ্চার্স, ব্লিউম ভেঞ্চার্স ও অন্যান্যরা।

Post a Comment

0 Comments