অতিরিক্ত লাভের আশায় বিপত্তি: বাজারে দাম বাড়লে, হিমঘর থেকে বের করে বিক্রি করবেন। বাড়তি লাভের আশায় হিমঘরে আলু মজুত করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরাই এখন প্রবল ক্ষতির মুখে। ইতিমধ্যেই জ্যোতি আলুর দাম পড়ে গিয়েছে বাজারে। এবার সেই দামই আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মজুত করা আলু নষ্টের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। সিঙ্গুরের আলু চাষিদের একাংশের দাবি, গতবছর বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায়, এ বছরের শুরু থেকেই গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কোল্ডস্টোরেজ খালি করে দিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত হিমঘরগুলিতে ৩৭ শতাংশ আলু মজুত ছিল। বর্তমানে তা ২৮ শতাংশের কাছাকাছি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১০ থেকে ১২ শতাংশ আলু বেরোবে হিমঘর থেকে। কিছু আলু বীজ তৈরির জন্য ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তারপরও ৯-১০ শতাংশ আলু হিমঘরেই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার মুখে ব্যবসায়ীদের একাংশ।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি উপদেষ্টা সুকুমার সামন্ত জানাচ্ছেন, সাড়ে আটশো টাকা বস্তায় লোড হয়েছিল। এখন সাড়ে ছশো টাকায় বেরোচ্ছে। এরকম চললে বহু ব্যবসায়ী স্টোর থেকে আলু বের করতে যাবেন না।
একদিকে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলুচাষি থেকে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, সারাবছর বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের আলু কিনে খেতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আগেভাগে পরিকল্পনা করে, কেন হিমঘর থেকে বের করা হল না আলু? তাহলে তো ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষেরই স্বার্থরক্ষা করা যেত!
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ: ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সমস্ত আলু বের করে দিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে নবান্নর একটি বৈঠকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুরগির মাংস (Chicken) ও সবজির (Vegetables) অতিরিক্ত দাম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দেশের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি বাংলাতেই (West Bengal)। কটাক্ষ করেছে বিজেপি (BJP)।
বাড়ছে বাজারদর: সাধারণত শীতে সবজির দাম কমে। কিন্তু, এবার এখনও পর্যন্ত ঠান্ডার আমেজ বাড়লেও, সেভাবে আলুর দাম কমতে দেখা যাচ্ছে না। গড়িয়াহাট বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। চন্দ্রমুখী ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
এই পরিস্থিতিতে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হার কমাতে, সোমবার নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, কৃষিমন্ত্রী, কৃষি বিপণনমন্ত্রী এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
ওই বৈঠকেই আলুর দাম কমাতে, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সমস্ত আলু বের করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "কোল্ড স্টোরেজে যা আলু আছে, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বের করতে হবে। তাহলে আলুর দাম কমবে। চাষিরা দাম পাচ্ছে না। চাষিরা যদি সাবলম্বি হয়, তাহলে এর থেকে ভাল কিছু হয় না।"
0 Comments