আজ বামপন্থী আইনজীবীদের উল্লেখ করে একটি খোলা চিঠি লেখেন শরীরশিক্ষা-কর্মশিক্ষা চাকরিপ্রার্থীরা। সেখানে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘আশা করেছিলাম আমাদের সাফল্যের জন্য বামপন্থিরা প্রথম থেকে যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল শেষ পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকবে। বঙ্গবাসী দেখবে একমাত্র বামপন্থীদের জন্য এতগুলো ছেলেরমেয়ের পরিবারের মুখে হাসি ফুটলো, পরিবারগুলো বাঁচল, বেকারত্তের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল। বামপন্থাই একমাত্র বেকারদের যুবকদের কর্মসংস্থানের দিশারী। কিন্তু নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা সেই ধারণাটাই ক্রমশ পাল্টে দিচ্ছে সকলের কাছে। নিয়োগ আটকালে সকলের ভেতরে বামেদের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাছাড়া কিছু বামপন্থী কমরেড যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে দিয়েছেন নিয়োগে স্টে পড়বে এবং কন্সিলিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থগিতাদেশ পরে গেল তাতে আমরা আশাহত।’
এখানেই শেষ নয়, রাজু দাস নামে এক চাকরি প্রার্থী একটি ভিডিয়ো বার্তায় বিকাশ ভট্টাচার্যকে তোপ দেগে বলেন, ‘আমরা রাজনীতির শিকার বা গুঁটি হতে চাইছি না। দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে চাইছি। চাকরিটা আমাদের চাই। এই দীর্ঘ লড়াইয়ে যাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, একাধিকবার আমাদের মঞ্চে এসেছিলেন আজ তাঁরাই যখন আমাদের বিপক্ষে চলে যায় তখন কষ্ট লাগে। নিজের মানুষই যখন পিঠে ছোড়া মারে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আজকে যে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আমাদের প্যানেল ভুক্ত করেছিলেন, আইনি লড়াই লড়েছিলেন এখনই তিনিই আমাদের বিপক্ষে চলে গিয়েছেন। এটা কষ্টের। এই মুহূর্তে কেন আমরা রাজনীতির শিকার হব?’
এরপর রাজুর আবেদন এটা ছেড়ে দিন। রাজনীতির জন্য নতুন বিষয় পাওয়া যাবে। এই ব্যাপার যদি মানুষের কাছে উন্মোচিত হয় ভবিষ্যত প্রজন্ম মেনে নেবে না। আজ পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা শূন্য। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমরাই সহায়তা করেছি। আপনারাও অনেক সাহায্য করেছেন। কিন্তু কোথাও গিয়ে আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।’
কেন ক্ষুব্ধ চাকরি প্রার্থীরা?
ছ’বছরের প্রতীক্ষার পর শুরু হয়েছিল কাউন্সেলিং। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সুখবর আসে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা বিষয়ক চাকরিপ্রার্থীদের জন্য। কাউন্সেলিংয়ের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু হঠাত্ই মোড় ঘুরে যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার। আদালতে দায়ের হয় নতুন একটি মামলা। সেই মামলার জেরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর।
১ হাজার ৪০৪ জন হবু শিক্ষক যখন চাকরি পাওয়ার একেবারে দোরগোড়ায়, তখনই মামলার কাঁটা। ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দিকে তির ক্ষুব্ধ চাকরি প্রার্থীদের। গান্ধীমূর্তির নীচে বসা চাকরি প্রার্থীরাও বিকাশবাবুর বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন।
কেন এই মামলা?
সুপার নিউমেরারি পোস্ট বা অতিরিক্ত পদ। এই পদ তৈরি করে অপেক্ষমানদের চাকরির ব্যবস্থা করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার ১৪০৪ চাকরিপ্রার্থীর জন্য ১৬০০ পদ তৈরি করা হয়। এই নিউমেরারি পদে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে ওয়েটিং লিস্টের বাইরে থাকা এক পরীক্ষা মামলা দায়ের করেন। কমিশন আদালতকে জানিয়েছিল, অপেক্ষমানদের চাকরি দিতে এই পদ তৈরি করা হয়েছে।
যা নিয়ে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে দাবি করেন, আইন ভেঙে এই নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতিও মন্তব্য করেন, ছাত্ররা যাতে ভাল শিক্ষক পান, সেটাই লক্ষ্য। এই সওয়াল জবাবের পরই নিয়োগে ১৪ দিনের স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেয় আদালত। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন চাকরি প্রার্থীরা।
যদিও অভিযোগ উড়িয়ে বিকাশবাবু বলেন, ‘এটা আরও একটা দুর্নীতি। খুব বড় দুর্নীতি। সরকার এখানে এই ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের আবার ভাঁওতার মধ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু মানুষকে আমার বিরুদ্ধে প্ররোচিত করছেন। সেটা করতেই পারে। আমি তো মামলা করি না। আমরা সওয়াল করি।’
0 Comments