এটা দুর্ভাগ্যের যে কলকাতার নেতা-মন্ত্রীরা ঝালদার বিষয়টা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন

বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত ঝালদায় প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এই খবরে তুমুল রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে ঝালদায়। শাসকদলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেসও। তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, যা হচ্ছে সবই নিয়ম মেনে।

এ দিকে কবে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে, সে বিজ্ঞপ্তি কবে বেরোবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবারও জেলা প্রশাসন মুখের কুলুপ খোলেনি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বুধবার নতুন রাজ্যপালের কাছে ঝালদায় রাজ্য সরকার প্রশাসক নিয়োগ করতে চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে চিঠি দেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ঝালদার তৃণমূলের পুরপ্রধান সোমবার তলবি-সভায় অপসারিত হলেও কংগ্রেস ও নির্দল কাউন্সিলরদের বোর্ড গঠন করতে না দিয়ে রাজ্য সরকার সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিদায় জানিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করতে চলেছে। সে দিনই ফিরহাদ জানিয়েছেন, অনাস্থার পরে নতুন বোর্ড গঠন পর্যন্ত ঝালদা পুরসভার কাজকর্ম চালাতে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে সরকারকে। তা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। অধীর ভুল বুঝে ভুল বকছেন বলে কটাক্ষও করেন মন্ত্রী।

যদিও পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ''বোর্ড গঠনের আগে প্রশাসক বসানোর কোনও নিয়মই নেই। হয় মন্ত্রী সেটা জানেন না, না হয় জেনে শুনে আইনের অপব্যাখ্যা করছেন।'' তাঁর হুঁশিয়ারী, ''আমরা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছি। তা বের হওয়া মাত্রই আদালতে যাব।'' তবে পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের দাবি, ''যা হচ্ছে সবকিছুই বিধি মেনে হচ্ছে।''

যদিও দলের মন্ত্রী প্রশাসক বসানোর কথা বললেও এ নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলেই অন্দরে। দলীয় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসার পরে তাঁর কাজকর্ম নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন দলেরই জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা ঝালদার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। এ দিন তিনি বলেন, ''এটা দুর্ভাগ্যের যে কলকাতার নেতা-মন্ত্রীরা ঝালদার বিষয়টা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। এই পুরপ্রধানকে আগলে রাখতে গিয়ে দলের যা সর্বনাশ হওয়ার হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগ করা হলে আরও সর্বনাশ হবে।''

বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বলেন, ''এটা প্রশাসনিক বিষয়। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।'' তবে প্রদীপের বক্তব্য নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ''তাঁকে অনেকবার প্রকাশ্যে মন্তব্যর ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আবার বলছি, তাঁর কোনও বক্তব্য থাকলে তা দলকে জানান।''

গত পুর-নির্বাচনে ১২টি আসনের ঝালদা পুরসভায় তৃণমূল ও কংগ্রেস উভয়ই পাঁচটি করে আসন পায়। দু'টি আসনে জয়ী হয় নির্দল। বোর্ড গঠনের কয়েকদিন আগে খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। তাঁর পরিবার ও কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, পুরসভার ক্ষমতা দখলের জন্যই খুন করা হয় তপনকে। যদিও সে অভিযোগ ঠিক নয় বলে শুরু থেকে দাবি করে আসছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবার অনাস্থা সংক্রান্ত তলবিসভায় দুই নির্দলকে নিয়ে কংগ্রেস পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের পরেও তাদের বোর্ড গঠনে প্রশাসনের তরফে সম্মতি না জানানোয় অসন্তুষ্ট বিক্ষুব্ধরা। তার মধ্যে ফিরহাদের ওই মন্তব্যে তাঁরা বেজায় চটেছেন।

নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুও কংগ্রেসের এক জন কাউন্সিলর। তাঁর অভিযোগ, ''ঝালদা পুরসভার ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূল কতটা মরিয়া, সেটা আমার স্বামীর হত্যার পরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দিনে দিনে তাদের ক্ষমতার কদর্য ব্যবহারে তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে।''

Post a Comment

0 Comments