মুকুলের হাত ধরে তৃণমূলে ইয়াসিন

বাম থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, সেখান থেকে বিজেপি। আবার সেখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা হাতে । ইয়াসিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে অবাক সকলেই । গত পঞ্চায়েত ভোটে ইয়াসিনের দাপটে মালদহ জেলার রতুয়ায় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধীরা। অভিযোগ উঠেছিল ব্যাপক অশান্তি করেছিলেন ইয়াসিন ও তাঁর দল।

যদিও সেই ইয়াসিনকে নিয়ে ২০২০ সালে ব্যাপক রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয় মালদহ জুড়ে। ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে ফুল বদল করেছিলেন তিনি । ফের ঘাসফুলের পতাকা হাতেই দেখা গেল ইয়াসিনকে । সল্টলেকে মুকুল রায়ের বাড়িতে গিয়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি । যদিও গোটা বিষয় নিয়ে নিশ্চুপ মালদহ জেলা নেতৃত্ব।

'কে এই ইয়াসিন?'- এই প্রশ্ন প্রকাশ্য সভায় করেছিলেন খোদ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইয়াসিনের উপরে মালদহের নেতৃত্বকে রাশ টানারও নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী। তার পরেও ২০২০ সালে তৃণমূলের মালদহ জেলা কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছিলেন খুন, জমি দখল, বেআইনি ভাবে অস্ত্র মজুতের মতো ১৮টি মামলায় অভিযুক্ত রতুয়ার ইয়াসিন শেখ। কলকাতায় তাঁর ফ্ল্যাটে হুগলির এক দুষ্কৃতীর মৃত্যুর ঘটনায় দলের অন্দরেই ইয়াসিনকে নিয়ে উঠতে শুরু করে প্রশ্ন। তাতে অস্বস্তিতে পড়ে মালদহের তৃণমূল শিবির।রতুয়ার বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন। পালাবদলের আগে তিনি ছিলেন বামেদের ছত্রছায়ায়।

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়াই করে জয়ী হন ইয়াসিন। বোর্ড গঠনে তৃণমূলকে সমর্থনের পরে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন তিনি। এর পরেই যোগ দেন তৃণমূলে। অভিযোগ, রতুয়ার দলীয় কর্মসূচিতে তৃণমূলের এক নেত্রীকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ায় তাঁর। হরিশ্চন্দ্রপুরে এক বৃদ্ধা খুনেও অভিযুক্ত ছিলেন। দু'টি ঘটনাতেই বিচারাধীন হিসেবে বছরখানেক জেলে ছিলেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে রতুয়ার জেলা পরিষদের আসনে স্ত্রী পায়েল খাতুন তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। সেই সময় ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স লুঠের অভিযোগ উঠেছিল।

 বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশন তাঁকে নজরবন্দিও করেছিল। তাঁর স্ত্রী মালদহ জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। মালদহ সফরে ইয়াসিনের উপরে রাশ টানার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ইয়াসিন দলে স্বমহিমায় রয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল দলীয় নেতৃত্বের একাংশের। তৃণমূলের জেলা কমিটিতে সম্পাদক করা হয়েছিল ইয়াসিনকে।

দলীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি ছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তত্‍কালীন জেলা যুব নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ইয়াসিনের। সেই সূত্রেই রাজ্যের তত্‍কালীন প্রভাবশালী এক নেতার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার পরেই দলে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। ওই সূত্রে জানা গিয়েছিল, তাঁর স্ত্রী কর্মাধ্যক্ষ হলেও সরকারি গাড়িতে তিনিই ঘুরে বেড়াতেন। এমনকী, তাঁর স্ত্রীর দফতরেও দলবল নিয়ে বসে থাকতে দেখা যেত তাঁকে। পরে সেই ইয়াসিন ফুল বদলে ফেলেন।

ইয়াসিন অবশ্য জানিয়েছেন, "আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতে সেগুলি বিচারাধীন। আমাকে এনআইএ দিয়ে বারবার ভয় দেখানো হচ্ছিল। তাই আমি বিজেপি যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ওই দল পছন্দ হয়নি। ভোটের আগে সিএএ-এনআরসি করে রাজ্যে অশান্তি বাঁধাতে চাইছে তারা। আমি তাই ফিরে এসেছি।" যদিও ইয়াসিনের যোগ নিয়ে অবাক মালদহ জেলা নেতৃত্ব।

Post a Comment

0 Comments