ওয়েব ডেস্ক; ৩ জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ভারত সরকার ২০২৩-কে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের যে প্রস্তাব রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে দিয়েছিল তা গৃহীত হওয়ায় কেন্দ্র বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষকে জন-আন্দোলনে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মূল উদ্দেশ্য ভারতকে মিলেট অর্থাৎ, জোয়ার, বাজরা এবং রাগির আন্তর্জাতিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে জোয়ার, বাজরা এবং রাগির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য আমরা পেয়ে থাকি। বর্তমানে ১৩০টি দেশে এই খাদ্যশস্যগুলি উৎপাদিত হয়। এশিয়া এবং আফ্রিকার ৫০ কোটি মানুষ জোয়ার, বাজরা এবং রাগিকে চিরায়ত খাদ্যশস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ভারতে এই তিনটি খাদ্যশস্য খরিফ মরশুমে মূলত চাষ হয়। এগুলি চাষ করতে কম জলের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য দানাশস্যের থেকে জোয়ার, বাজরা ও রাগি চাষে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
২০২২-এর ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা – এফএও ইতালির রোমে ২০২৩-কে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঐ অনুষ্ঠানে ভারতের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছিল। কৃষি ও কৃষককল্যাণ দপ্তর এই উপলক্ষে সংসদে জোয়ার, বাজরা এবং রাগি দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে তা সদস্যদের মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত মন্ত্রক, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন, কৃষক, স্টার্ট-আপ সংস্থা, রপ্তানিকারক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভারতীয় দূতাবাসগুলির সঙ্গে একযোগে বছর জুড়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর ফলে খাদ্য হিসেবে এবং কৃষিকাজে জোয়ার, বাজরা এবং রাগির উপযোগিতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা সম্ভব হবে। ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক মন্ত্রক জানুয়ারি মাসের ১৫ দিন ১৫ ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে। এই কর্মসূচিতে ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, পুষ্টিবিদ সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতন ব্যক্তিরা বিভিন্ন ওয়েবিনারের মাধ্যমে জোয়ার, বাজরা এবং রাগির উপযোগিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সকলের কাছে পরিবেশন করবেন। মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিহারে জোয়ার, বাজরা এবং রাগিকে ব্যবহার করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসএসএসএআই পাঞ্জাব, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে জোয়ার, বাজরা এবং রাগি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার উপযোগিতা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ছত্তিশগড়, মিজোরাম এবং রাজস্থান আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ উপলক্ষে খাদ্যোৎসব, মেলা, কর্মশালা এবং সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানগুলিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং জোয়ার, বাজরা ও রাগি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র এবং উত্তরাখণ্ডেও জানুয়ারি মাসে এই উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বেলজিয়ামে একটি বাণিজ্য মেলায় এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অংশগ্রহণ করবে যেখানে জোয়ার, বাজরা এবং রাগির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পরিবেশিত হবে। বছর জুড়ে ১৪০টির বেশি দেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলি নানা কর্মসূচির আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছে। জানুয়ারি মাসে আজারবাইজান এবং বেলারুশে ভারতীয় দূতাবাস ফুড ব্লগার, খাদ্যশস্য আমদানিকারী সংস্থা এবং স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলিকে নিয়ে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আবুজা এবং লাগোস-এ আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশন মিলেট খাদ্যোৎসব উদযাপন করবে। জি-২০ গোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈঠকেও জোয়ার, বাজরা এবং রাগি দিয়ে তৈরি খাদ্য সামগ্রী পরিবেশিত হবে। সংশ্লিষ্ট বৈঠকগুলিতে কৃষক এবং স্টার্ট-আপ ও খাদ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এভাবে সারা বছর জুড়ে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষে জোয়ার, বাজরা এবং রাগি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
0 Comments