ওয়েব ডেস্ক; ২৮ জানুয়ারি : সুপ্রিম কোর্টের তিনজন শীর্ষস্থানীয় বিচারপতি, যার মধ্যে থাকবেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিনিয়র বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কল, সাঙ্গানেরের মুক্ত কারাগার পরিদর্শনে যাবেন। এত উপর মহল থেকে এই ধরনের পরিদর্শন এই প্রথম। পরিদর্শক দল একটি সাশ্রয়কারী ও মানবিক সংশোধনাগারের মডেল কীভাবে তৈরি করা যায় তার মূল্যায়ন করবেন। অর্থাৎ এমন এক কারাগার যেখানে বন্দীরা সপরিবারে বসবাস করেন এবং জীবিকা অর্জন করেন।
জয়পুরের সাঙ্গানের মুক্ত কারাগার পরিদর্শনে তাঁর সঙ্গী হবেন সুপ্রিম কোর্টে তাঁর সহকর্মী বিচারতি শ্রীপাঠি রবীন্দ্র ভাট ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস। এছাড়াও থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর এবং রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পঙ্কজ মিঠাল, রাজস্থান ও ওড়িশা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে এস ঝাভেরি।
এই কারাগার পরিদর্শনে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস এবং রাজস্থানের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল পুলিস অ্যান্ড প্রিজনস শ্রী অজিত সিংও উপস্থিত থাকবেন। এর আয়োজক হল PAAR (প্রিজন এইড অ্যান্ড অ্যাকশন রিসার্চ), একটি নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থা যা সারা দেশের কারাব্যবস্থা নিয়ে চর্চা করে এবং রাজস্থানের মুক্ত কারাগার মডেল সম্প্রসারণের পক্ষে।
PAAR প্রতিষ্ঠাতা স্মিতা চক্রবর্তী, যাঁর ২০১৭ সালের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ২০১৮ সালে এক যুগান্তকারী রায় দেওয়া হয়েছিল, তিনি বললেন “মুক্ত কারাগার হল কারাগারের এক মানবিক বিকল্প এবং সরকারি কোষাগারের উপর কম চাপ ফেলে। এই কারাগারগুলো সাবেকি বদ্ধ কারাগারের চেয়ে ১৪ গুণ শস্তা। একটা সাবেকি বা বদ্ধ কারাব্যবস্থায় যতজন কর্মী লাগে এখানে তার ৮১ ভাগের এক ভাগ দরকার হয়। একটা মুক্ত সংশোধনাগারে অপরাধপ্রবণতা বা অপরাধীদের ফের অপরাধ করার হারও প্রায় শূন্য।”
২০১৮ সালে বিচারপতি এম বি লোকুর একটি যুগান্তকারী রায় দেন। সেই রায়ে প্রত্যেক জেলায় মুক্ত কারাগার তৈরির কথা বলা হয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে নিয়মাবলী তৈরি করতে বলা হয়। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন “মুক্ত সংশোধনাগারের মানবতাবাদী ধারণা প্রয়োগ করার সময় এসে গেছে। আমি সমস্ত রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি এই ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক এবং প্রত্যেক জেলায় একটা করে মুক্ত কারাগার চালু করা হোক।”
রাজস্থানের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল পুলিস অ্যান্ড প্রিজনস শ্রী অজিত সিং বলেন “আমার এখনো জোরালো ধারণা মুক্ত কারাগার কারাগারের বহু সমস্যারই সমাধান। যে কোনো ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লক্ষ্য হল বন্দীর সংশোধন ও পুনর্বাসন। মুক্ত সংশোধনাগারের সুবিধাগুলো ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং বন্দীর সম্ভ্রমের মত মৌলিক মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আমাদের সারা দেশে এই ব্যবস্থার প্রয়োগ এবং বৃদ্ধির কাজে গতি হারানো উচিত নয়।”
এই প্রতিনিধি দলের কারাগার পরিদর্শনের পর এক বিশেষ অনুষ্ঠান করবেন সুস্মিত বোস। তিনি এমন একজন সামাজিক পরিবর্তন শিল্পী, যিনি পাঁচ দশক ধরে সঙ্গীতের শক্তিকে ব্যবহার করে মানবাধিকার সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে তুলে ধরছেন।
0 Comments