৭৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে উডল্যান্ডসের ইতিহাস সমৃদ্ধ স্বরণিকা প্রকাশ



ওয়েব ডেস্ক; ১১ জানুয়ারি: উডল্যান্ডস মাল্টিস্পেসালিটি হস্পিটালস লিমিটেড এই বছরে সাতাত্তর বছরে পদার্পণ করল। এই উপলক্ষে গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পক্ষ থেকে হাসপাতালের বিগত সাতাত্তর বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি কফিটেবল বুক প্রকাশ করা হয়। বইটির পাতায় পাতায় পাওয়া যাবে বৃটিশ মহিলাদের একটি ছোট্ট প্রসূতি সদন থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন মাইল স্টোন ছুঁয়ে আজকের এক অত্যাধুনিক মাল্টিস্পেসালিটি হাসপাতাল হয়ে ওঠার কাহিনী।

 অনেকগুলি বিরল, রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক ফোটগ্রাফ ‘লিগাসি অফ হিলিং’ নামের এই বইটির সম্পদ। আলিপুরের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হসপিটালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও শ্রীমতি রূপালী বসু বইটি প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আর পি এস জি গ্রুপ্রের পাওয়ার সেক্টরের প্রেসিডেন্ট, ফেলো বোর্ড সদস্য, গৌতম রায়, বইটির লেখক রাজীব সোনি, কন্সোর্টিয়াম অফ অ্যাক্রেডেটেড হেলথ কেয়ার অর্গানাইজেশনের (CAHO) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুদীপ রায়। এছাড়াও হাসপাতালের প্রবীণ ক্লিনিকাল ডাইরেক্টর ও ডাক্তাররা এবং সিনিয়র ম্য্যানেজমেন্ট কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। 

উল্লেখ্য উডল্যান্ডস ভারতের স্বাধীনতা লাভের এক বছর আগে ১৯৪৬এ বৃটিশদের নির্মিত প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল। এলগিন রোডে ইস্ট ইন্ডিয়া ক্লিনিক নামে ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তি সাতাত্তর বছরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উডল্যান্ডস বড় হয়েছে, নিজেকে পাল্টেছে,সমকালীন উন্নততম প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে শহরের সেরা চিকিৎসকবৃন্দ ও নার্সিং টিমকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে আজকের একটি প্রধান মাল্টি স্পেসালিটি হাসপাতালের মহিরুহে পরিণত হয়েছে। 

‘লিগাসি অফ হিলিং’ থেকে কিছু কথা 
আরম্ভেরও শুরুতে ১৯৪৬এর বৃটিশদের এক আলোচনাসভায় একটি হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাঙ্কার হিসাবে চ্যাটার্ড ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়া ও চায়নাকে নিযুক্ত করা হয়। ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্কে উনিশ লাখ টাকা জমা রেখে বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স বোর্ড হিসাবে হাসপাতালের কাজ শুরু করে। 

শুরুতে ইস্ট ইন্ডিয়া ক্লিনিক লিমিটেড নামে শহরের অভিজাত এলাকায় শুধুমাত্র বৃটিশদের জন্য হাসপাতালের দরজা খোলা হয়। ১৯৪৭এ সংস্থা এলগিন রোডে দুটি নার্সিং হোম চালু করে। উডল্যান্ডসের বর্তমান ভবন ১৯৬১ সালের আটই জানুয়ারি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় উদ্বোধন করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া ক্লিনিক লিমিটেড এই বাড়িতে উঠে আসে। এলগিন রোড থেকে পরবর্তি কালে রাসেল স্ট্রিটে উঠে আসা নার্সিং হোমগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

মহারাজা কোচবিহার ও উডল্যান্ডস প্যালেস     
কোচবিহারের মহারাজার সম্পত্তির ওপরেই আজকের উডল্যান্ডস দাঁড়িয়ে। আঠেরশ আশির শেষের দিকে আলিপুর রোড থেকে ডায়মণ্ড হারবার রোড ও বর্তমান ন্যাশনাল লাইব্রেরি রোড থেকে কমান্ড হাসপাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা কোচবিহার এস্টেট থেকে কিনে নেওয়া হয়। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০এ মহারাজার শহরের উডল্যান্ডস প্যলেস নামে পরিচিত বাড়িটিতে ঊডল্যান্ডস নার্সিং হোম শুরু হয়।  

প্রথম দিকের উডল্যান্ডস শেতাঙ্গ মহিলাদের সেরা প্রসূতিসদন হিসাবে শুরুতে বৃটিশরা এটিকে গড়ে তুলেছিল। এখানকার ‘ডেলি রিটার্ন অফ বার্থ’ নামের রেজিস্টারে এমনকি ১৯৪৮এর মাঝ পর্যন্ত শুধু সাহেবি নাম ও বৃটিশ নাগরিকদেরই উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ প্রথম ভারতীয় দম্পতি হলেন কলকাতার ক্লাইভ স্ট্রিটের এস কে বোস ও রেখা বোস ও তাঁদের পুত্র সন্তান। এরপর ধীরে ধীরে কলকাতার অভিজাতরা এই হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। 

উডল্যান্ডস ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব বিগত পঁচাত্তর বছরে মাদার টেরেসা, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, সত্যজিত রায়, জ্যোতি বসু ,আরপি গোয়েঙ্কা, মমতা ব্যানার্জি, প্রসেনজিত চ্যাটার্জি, সৌরভ গাঙ্গুলি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য, অমিতাভ বচ্চন এবং মাধবি মুখার্জির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের প্রথম পছন্দ ছিল উডল্যান্ডস। 

নতুন উডল্যান্ডস
বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে পঁচাত্তর বছরের পুরান উডল্যান্ডস সব সময়ে তার রোগীদের সেরা পরিষেবা দিয়ে এসেছে। খুব শীঘ্রই ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বর্তমান হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই একটি দশ তলা ভবন নির্মান করা হবে। হাসপাতালের উন্নয়ন কার্যক্রমের অঙ্গ হিসাবে হাসপাতালে আরো শয্যা ও বিভিন্ন উন্নত যন্ত্রপাতি আনা হবে। বিগত অতিমারিকে মনে রেখে ওয়ার্ডের জীবাণু মুক্তি, বায়ু চলাচল প্রভৃতির উপরেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঊডল্যান্ডস শহরের বেসরকারী হাসপাতালগুলির পথিকৃৎ। বিভিন্ন সময়ের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার হাসপাতালের চলার পথের প্রেরণা। একদিকে যেমন হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে, সুপার স্পেসালিটি যুক্ত হয়েছে অন্যদিকে তেমনই কলকাতার তথা দেশের সেরা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এখানে রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে হসপিটালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও শ্রীমতি রূপালী বসু আশাপ্রকাশ করেন অতীতের মতোই উডল্যান্ডস হাসপাতাল একটি গৌরোবজ্বল ভবিষ্যতের উত্তরাধিকারী হবে।

Post a Comment

0 Comments