মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল সকলকে কাছে আনল 'ক্লোজ দ্য গ্যাপ' ক্যাম্পেনের মাধ্যমে



ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি : বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২৩ হচ্ছে তিন বছর ব্যাপী 'ক্লোজ দ্য গ্যাপ' ক্যাম্পেইন পালনের দ্বিতীয় বছর, যার মূল লক্ষ্য হল সমতা আনা। এই বছরের কর্মকাণ্ডের মূল দিকটি হল আরো নতুন সম্পর্ক তৈরি করা এবং সমমনস্ক মানুষদের একত্রিত করা যাতে আরও বেশি জোরাল ডাক হয়। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের অনকোলজি বিভাগ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করেছিল যেখানে অংশগ্রহণ করেন একাধিক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, যেমন ডঃ সৌরভ দত্ত, ডিরেক্টর মেডিকা ক্যান্সার প্রজেক্ট, ডঃ সুবীর গাঙ্গুলি - সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং পরামর্শদাতা মেডিকা অনকোলজি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সজল মিত্র, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফাইট ক্যান্সার এর প্রতিনিধি, ক্ষুদিরাম পাঠাগার বহরমপুরের নিলেন্দু সাহা, আর উদয়ন লাহিড়ী - সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেডিকা হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, অয়নাভ দেবগুপ্ত - সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেডিকা হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড। এছাড়াও বাস্তব জীবনের নায়করা এসেছিলেন এই প্যানেল আলোচনায় তাদের পরিবার নিয়ে যারা বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে জয়যুক্ত হয়েছেন, যেখানে তাদের অতিক্রম করতে হয়েছে আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা, কিন্তু তার সত্ত্বেও তারা ছেড়ে চলে যাননি লড়াইয়ের ময়দান।
মেডিকা, পূর্ব ভারতে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠা স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রুপ, সমাজের এক দায়িত্ববান পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে এক আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্বাসী। মেডিকা বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকলেই ৩৬০ ডিগ্রি কেয়ার গিভার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। যদিও এখন ক্যান্সার প্রতিরোধ, ক্যান্সার ধরা পড়ার ব্যবস্থা, চিকিৎসা সব মিলিয়ে অনেকটাই এগানো গিয়েছে, তবুও এখনও অনেক মানুষ সাধারণ ক্যান্সার চিকিৎসা বা পরিষেবা পাওয়ার থেকে কয়েক যোজন দূরে রয়েছেন। তবে প্রতিটি কেয়ারগিভার বা পরিষেবা প্রদানকারী নিয়মিত ভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন এই গ্যাপ কমানোর জন্য। রোজগার, শিক্ষা, ভৌগলিক স্থান, বয়স, অক্ষমতা এবং জীবনধারনের ফারাকের মত বিষয় রয়েছে যা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করে।
উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্য বিশ্ব ক্যান্সার দিবস নিয়ে আর উদয়ন লাহিড়ী, যৌথ প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, বলেন,"আমরা সমগ্র মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল থেকে খুব আপ্লুত যে আজকের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে আপনারা যোগদান করেছেন। গত তেইশ বছর ধরে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে মানুষের মধ্যে ক্যান্সার নিয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। ক্যান্সার চিহ্নিত, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ - এই তিনটি দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রে। 
সকলকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে স্বাগত জানিয়ে আর উদয়ন লাহিড়ী, সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেডিকা হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড বলেন," আমরা মেডিকা হসপিটালের সকলে খুবই আপ্লুত আপনাদের আজকের এই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে যোগদান দেখে। গত তিরিশ বছর ধরে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়ে আসছে সারা বিশ্বে যেখানে সকলকে সচেতন করা এবং ক্যান্সার চিহ্নিত করা, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ নিয়ে সার্বিক জনমত তৈরি করা। ক্যান্সার সত্যি একটি মারণ রোগ এবং আমরা মেডিকা হসপিটালে ভীষণভাবে উদ্যোগী কিভাবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দ্রুত রোগের ধরা পড়া এবং জীবনধারনের ক্ষেত্রে কি কি দিক মাথায় রাখতে হবে যা অনেক সময়েই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করতে এবং বিশ্বাস তৈরি করতে, বিশেষ করে যারা এই কর্কট রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাদের অনুপ্রেরণার জন্য আমাদের সাথে রয়েছেন সেই সব বাস্তব জীবনের নায়করা যারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়যুক্ত হয়েছেন সমস্ত বাধা বিপদ অতিক্রম করে। এছাড়াও আমাদের সাথে রয়েছেন বিভিন্ন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি যারা প্রতিনিয়ত দেখে চলেছেন ক্যান্সার রোগীদের এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য জানাবেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলে এগিয়ে আসুন।" 
লাহিড়ী বাবুর কথার সূত্র ধরেই অয়নাভ দেবগুপ্ত, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেডিকা হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, বলেন," আমরা 'ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ' ক্যাম্পেইন এর দ্বিতীয় বছরে এসে পৌঁছেছি, আমরা একসাথে বলছি এবং এগিয়ে চলেছি কারণ আমরা জানি যে একতাই শক্তি। যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানবিকতা ভীষণ রকম প্রয়োজনীয়, তাই সার্বিক ভাবে মানসিক চিন্তা, কিভাবে মূল স্রোতে ফেরানো যাবে, জীবনে আবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দিকগুলোর বিষয়ে নজর দেওয়া খুব দরকার। একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে আমরা সমস্যা চিহ্নিত করে গ্যাপ বা দূরত্ব কমাতে চাই এবং ভারত ও সারা বিশ্বকে ক্যান্সার মুক্ত করতে চাই।"
এই প্যানেল আলোচনায় এবং পরবর্তী সেশনে উপস্থিত সকলে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বিষয় নিয়ে জানতে পেরেছেন যেমন অত্যাধুনিক ক্যান্সার ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যান্সার ধরা পড়ার দিকটি, ক্যান্সার রোগী এবং কেয়ারগিভারদের সাপোর্ট সহ মেডিকায় বিশেষ চিকিৎসার পরিকাঠামো।
এই বছরের বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের থিম নিয়ে বলতে গিয়ে ডঃ সৌরভ দত্ত, মেডিকা ক্যান্সার প্রজেক্টের ডিরেক্টর জানান,"একজন ডাক্তার হিসেবে আমার মনে হয় ক্যান্সার চিকিৎসা স্বল্প খরচে সম্ভব যদি বেশ আগে ধরা পড়ে। দেখা গিয়েছে যারা প্রথমে কিছু উপসর্গের সাথে সাথেই স্ক্রিনিং করান, তাদের গড় আয়ু বেশি। ক্যান্সার, যা আগে বলা হতো যে চিকিৎসায় সেত্র ওঠা সম্ভব নয়, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে সেরকম নয়। ডাক্তার হিসেবে আমরা অনেক ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করেছি যারা এখন জটিলতা ছাড়াই খুশি ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। তাই এখন যেন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসি এবং জনসাধারণকে আরো সচেতন করে তুলি ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসা নিয়ে।
ক্যান্সারের ম্যানেজমেন্ট এবং সামনের দিনে কিভাবে এগোনো যেতে পারে, এই বিষয়ে বক্তা এবং ইভেন্টের মডারেটর ডঃ সুবীর গাঙ্গুলি, সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং মেডিকা অনকোলজি বিভাগের পরামর্শদাতা বলেন,"ভারতে বর্তমানে প্রায় ২.২৫ মিলিয়ন ক্যান্সার রোগী রয়েছে, যার মধ্যে ১ মিলিয়ন নতুন কেস দেখা গিয়েছে বার্ষিক ভাবে আর ০.৮৮ মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সারে। তবে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে যাওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে যেমন গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, অসংযমী জীবনযাপন, যত্রতত্র শহরায়ণ এবং মাত্রাতিরিক্ত দূষণ। উন্নত দেশগুলোর থেকে ভারতে ক্যান্সার চিকিৎসা পিছিয়ে আছে কারণ সচেতনতার অভাবের সাথে রয়েছে দেরীতে ধরা পড়া, অশিক্ষা, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়ার দিকগুলো। শুধুমাত্র না জানার জন্য অনেক ক্যান্সার রোগী শুরুতে চিকিৎসা করান না। অশিক্ষা এবং দারিদ্র্য অনেক সময় দেরীতে হসপিটালে ভর্তি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়। এর ফলে আজও অনেক মানুষের ধারণা রয়েছে যে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা হতে পারে যদি আগে ধরা পড়ে।
এছাড়া উনি জানান," বেশিরভাগ ক্যান্সার হসপিটাল রয়েছে শহরে বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে, যার ফলে গ্রামাঞ্চলে অত্যাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ মেলে না বললেই চলে। তবে আমরা খুবই গর্বিত যে মেডিকার দক্ষ সার্জেনরা, যারা বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্মের দ্য ভিঞ্চি একস রোবোটিক সার্জিক্যাল সিস্টেম যা বিভিন্ন বিনাইন এবং অনকোলজিকাল পরিস্থিতির চিকিৎসায়। আমরা খুব গর্বিত যে শেষ এক বছরের কম সময়ে পূর্ব ভারতের প্রথম হসপিটাল হিসেবে ১০০টি রোবোটিক সার্জারি সম্পন্ন করতে পেরেছে।"
এই প্যানেলে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা যারা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দর্শকদের সমৃদ্ধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন দরকারি তথ্যরসাথে তাদের অভিজ্ঞতার দিকটি তুলে ধরেন। ক্যান্সারকে হারিয়েছেন যারা এবং যারা কেয়ার গিভার, তারা বিভিন্ন কৌশল এবং ব্যক্তি জীবনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন, যা তাদের ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করেছেন অনেক চিন্তা দুশ্চিন্তার মধ্যে, বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসা এবং ক্যান্সার রোগীদের খেয়াল রাখার বিষয়টি মাথায় নিয়ে।
কনফারেন্সের শেষে ক্যান্সার বিজয়ী, কেয়ারগিভার এবং যেই সমস্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উপস্থিত ছিল, তাদের সবাইকে মেডিকার তরফ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় যুক্ত হওয়ার জন্য এবং আশা না হারানোর জন্য।

Post a Comment

0 Comments