ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ৯ মে, : মূত্র থলির ক্যান্সার সচেতনতা মাস উদযাপনে, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, আয়োজন করেছিল একটি সচেতনতা মূলক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সোমবার ৮ ই মে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে, যেখানে মূত্রথলির ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপের সদস্যরা। এই কনফারেন্সে জোর দেওয়া হয় ' লাইফ বিয়ন্ড ব্লাডার ক্যান্সার' বিষয়ের উপর। এই অনুষ্ঠানে ডা. অভয় কুমার, বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি, রোবটিক সার্জারি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল মূত্রথলির ক্যান্সার সংক্রান্ত বিভিন্ন ধ্যান ধারনা এবং মিথ নিয়ে বলেন এবং এই রোগের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করেন। প্রায় ৫০ জন মানুষ, যারা মূত্রথলির ক্যান্সারকে হারিয়ে জয়যুক্ত হয়েছেন, নিজেদের লড়াইয়ের কাহিনী শোনান। এরপর তারা একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এই উপলক্ষ্যে ডা. অভয় কুমার, বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি, রোবটিক সার্জারি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, বলেন," এই বছর মূত্রথলির ক্যান্সার সচেতনতা উদযাপন মাসে আমরা জোর দিচ্ছি রোগীদের দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটানোর দিকে। আমাদের দিক থেকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হল যাতে সমস্ত বয়সের মানুষের কাছে খুব সহজেই চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। মূত্রথলির ক্যান্সারের কোন উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে। মেডিকা সব সময়েই ক্যান্সার নিয়ে যে চিরচারিত ভাবনা রয়েছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। যদি আগে ধরা পড়ে, ক্যান্সারের চিকিৎসা আগেভাগে শুরু হয়, তাহলে সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেকটা বেশি। এখানে সাপোর্ট গ্রুপ উপস্থিত রয়েছে। তারা উপস্থাপন করতে চলেছে যে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর, জয় যুক্ত হয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটানো অসম্ভব নয়।" তিনি এও জানান,"এটি মানতেই হবে যে টিমের দিক থেকে প্রচেষ্টা অনেক কার্যকরী আমাদের এই বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে এবং নিয়মিত চেকআপ আর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিতে। এর ফলে আমরা আগেই ক্যান্সার হয়েছে কিনা জানতে পারি এবং অতঃপর গড় আয়ু বেশি হওয়া বাস্তব করতে পারি। আমরা যেন নিয়মিত এই সাহায্য বা সাপোর্ট করতে থাকি যাতে ক্যান্সার চিকিৎসা এবং ক্যান্সার এড়ানোর ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে কার্যকর হতে পারি। আমি এই মূত্রথলি ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপের সকলকে দেখে খুবই আপ্লুত, যেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন আগে যারা রোগী ছিলেন। এই গ্রুপ সামাজিক স্তরে মানুষের মধ্যে কাজ করে চলেছে অনেক আশা ভরসা নিয়ে। প্রতিটি জীবনের গল্পই অনুপ্রেরণা দায়ক। আমি উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানাই এরকম সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করার জন্য।"
এই এক ঘন্টার অনুষ্ঠান এবং কথোপকথনের সেশনে দর্শকরা ক্লিনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে পারেন, যেখানে ক্যান্সারের উপসর্গ থেকে টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রোগীর নিজেদের জীবনের গল্প তুলে ধরেন।
৬৪ বছর বয়সী সঞ্জয় ভৌমিক, যিনি আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন, বলেন," গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে আমার ব্লাডারে একটি সিস্ট ধরা পড়েছিল। পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা যায় যে সেটি ম্যালিগন্যান্ট এবং ক্যান্সার স্টেজ দুই। এক মাসের মধ্যে মেডিকাতে আমার অস্ত্রোপচার হয়। আমার ক্যান্সার চিকিৎসা সফল ভাবে শেষ হয়েছে এবং আমি এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। বর্তমানে আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি এবং বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠি। মেডিকার অনকোলজি টিম যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যি অনবদ্য। আমার সেরে ওঠার প্রতিটি পর্বেই তাদের সাহায্য অনস্বীকার্য। আমি তাদের পারদর্শিতা এবং সহমর্মিতার জন্য খুবই কৃতজ্ঞ।"
রমেন মুখার্জি, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী এবং বিশ্ব ভ্রমণকারী, যার রাডিক্যাল সিস্টেকটমি ইলিয়াল কনডুইট অস্ত্রোপচার হয়েছিল (এই অস্ত্রোপচারে থলি বাদ দিয়ে পেটের বাইরে থলি লাগানো হয়), বলেন,"প্রথমে ডঃ অভয় কুমার আমার ব্লাডার ক্যান্সার অস্ত্রোপচার করে দিয়েছিলেন অন্য একটি প্রাইভেট হসপিটালে। ওনার উপর বিশ্বাস এবং রোগীদের প্রতি ওনার সহমর্মিতা আমাকে মেডিকাতে নিয়ে এসেছিল। মেডিকার পরিকাঠামো ভীষণ ভাবে রোগী কেন্দ্রিক এবং আমার সেরে ওঠার পিছনে এখানকার পরিবেশ খুব সাহায্য করেছে। আমার চিকিৎসার পরবর্তী সময়ে আমি সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছি এবং যেই সব রোগী এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের সাহায্য করছি।"
প্রদীপ মুখার্জি, জানান," ২০০১ সালে যখন আমার ব্লাডার ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন আমি একাধিক হসপিটালে চিকিৎসার জন্য যাই। একটি অস্ত্রোপচার হলেও সেটি বিফল হয় এবং এরপর আর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয় না দুর্বল হার্ট এবং কোমর্বিড কন্ডিশনের জন্য। মেডিকাতে প্রথমে আমার হার্টে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ডঃ অভয় কুমারের কাছে রেফার করা হয়। ইউরোলজিতে ডঃ অভয় কুমারের পারদর্শিতা এবং সহমর্মিতার সাথে রোগীর চিকিৎসা করার দিকটি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং সমগ্র চিকিৎসা পদ্ধতি চলাকালীন অনেক সহজ হতে পারি। বর্তমানে আমি ক্যান্সার ফ্রী এবং আমি বাকি ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসা করানোর দিকে অনুরোধ করব, কারণ ক্যান্সার মানেই আর মৃত্যুর পরোয়ানা নয়।"
মেডিকা, পূর্ব ভারতের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা স্বাস্থ্য পরিষেবাকারী, বিগত কয়েক বছর ধরে কাজ করে চলেছে কলকাতায় আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলার দিকে যেখানে অসাধারণ ডাক্তার, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ ৩৬০ ডিগ্রি কেয়ার গিভিং আঙ্গিকে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জানান," সারা বিশ্বেই মূত্রথলির ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে এবং ভারতের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ উপরের দিকেই রয়েছে রাজ্যগুলোর মধ্যে। মূত্রথলির ক্যান্সারের বিশেষ কিছু উপসর্গ রয়েছে। যদি সেগুলো দ্রুত ধরা পড়ে, এবং দ্রুততার সাথে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়, তাহলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভবপর হবে। সারা বিশ্বে মূত্রথলির ক্যান্সার দেখা গিয়েছে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে। তাই চিকিৎসার সাথে যুক্ত পেশাদার হিসেবে আমরা সবাইকে পরামর্শ দিই যে কোন রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করলে পরীক্ষা করিয়ে নিন।"
ড. অয়নাভ দেবগুপ্তের কথার সাথে কিঞ্চিৎ একমত হয়ে আর উদয়ন লাহিড়ী, ডিরেক্টর, মেডিকা সিনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড,বলেন," মেডিকাতে উচ্চমানের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো থাকার দরুন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব, যদি আগে ধরা পড়ে। দিনের শেষে মাথায় রাখতে হবে যে প্রতিটি জীবনই মূল্যবান এবং হসপিটাল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরো বেশি জীবন বাঁচানো। আজ এই বিশেষ দিনে আমরা আপ্লুত সকলকে দেখে যারা এই রোগের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে সুস্থ সবল জীবনযাপন করছেন কঠিন পথ পেরিয়ে।"
উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নেন সেই সমস্ত মানুষেরা তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে যারা প্রতিকূলতার মধ্যে জয় করেছেন এই রোগকে। যেভাবে তারা এগিয়ে এসেছেন এই অনুষ্ঠানের জন্য এবং একে অন্যকে সাহায্য করেছেন, তা কুর্নিশ জানানোর মত। সেই সব মেডিকার স্টাফের জন্য অনেক প্রশংসা প্রাপ্য যারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগীদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত নিজের সেরা দিয়ে চলেছেন।
0 Comments