আইআইএম কাশীপুর নতুন ২০২৩-২৫ স্নাতকোত্তর ব্যাচের জন্য উদ্বোধনী প্রোগ্রাম আয়োজন করল



ওয়েব ডেস্ক; ৪ জুলাই: দুবছরের এমবিএ পাঠক্রমে ২০২৩-২০২৫ ব্যাচে ভর্তি হওয়া ৩২১ জন উচ্চাকাঙ্ক্ষীর জন্য এক আমূল পরিবর্তনকারী যাত্রার গ্যারান্টি দিল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কাশীপুর। আরও ১৭০ জন ছাত্রছাত্রী আইআইএম কাশীপুরে ভর্তি হয়েছে দুবছরের এমবিএ (অ্যানালিটিক্স) পাঠক্রমে।
এমবিএ পাঠক্রমে ভর্তি হওয়া ৩২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৯ জন পুরুষ এবং ৬২ জন মহিলা। এমবিএ (অ্যানালিটিক্স) পাঠক্রমে ৫২ জন পুরুষ এবং ১১৮ জন মহিলা। ডক্টরাল পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছে ৯ জন শিক্ষার্থী। লক্ষণীয় যে এ বছর ইনস্টিটিউট এমবিএ পাঠক্রমে ভর্তি ২৬৪ থেকে বাড়িয়ে ৩২০ করেছে এবং এমবিএ (অ্যানালিটিক্স) পাঠক্রমে ৮০ থেকে ১৬০ করেছে।
আইআইএম কাশীপুরের এমবিএ, এমবিএ (অ্যানালিটিক্স) ও ডক্টরাল (পিএইচডি) পাঠক্রমগুলোর (শিক্ষাবর্ষ ২০২৩-২৫) ইনগোরাল প্রোগ্রাম শুরু হল ২৬শে জুন থেকে ৩০শে জুন ২০২৩ ইনস্টিটিউটে পরিচালিত একটা ওরিয়েন্টেশন সেশনের মাধ্যমে। এর উদ্দেশ্য নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউটের বিদ্যায়তনিক ও সামাজিক জীবনে মিশিয়ে নেওয়া। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৫০-র বেশি শিক্ষার্থী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠান নতুন ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক আনন্দের মুহূর্ত। এর মাধ্যমে তারা অতি সম্মানীয় আইআইএম গ্রুপের অংশ হয়ে গেল।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ইনস্টিটিউটকে সম্মানিত করেছেন প্রধান অতিথি  আশিস মহাপাত্র, কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, সফটব্যাঙ্কের মদতপ্রাপ্ত অফবিজনেস এবং গেস্ট অফ অনার ডঃ স্বাতী জৈন, ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ অ্যানালিটিক্স অ্যাট ইএক্সএল। আইআইএম কাশীপুরের প্রাক্তনী এবং ডিরেক্টর, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং অ্যাট এসজিপিএল,  আমোদ ত্রিপাঠি, ছিলেন বিশেষ অতিথি।
ফ্যাকাল্টি সমেত অধ্যাপক কুলভূষণ বালোনি, ডিরেক্টর, আইআইএম কাশীপুর, অধ্যাপক মালা শ্রীবাস্তব, ডিন অফ অ্যাকাডেমিক্স অ্যাট আইআইএম কাশীপুর এবং সম্ভাব্য শিক্ষার্থীরাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আইআইএম কাশীপুরে ইনগোরাল প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে আশিস মহাপাত্র বললেন “নিজের জীবনের দায়িত্ব নাও এবং পারদর্শিতা দেখাও।” তিনি জীবনের ছটা ‘এইচ’-এর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন “প্রথম এইচ হল হাঙ্গার, অর্থাৎ খিদে। স্বপ্ন দেখা এবং তোমার চারপাশের লোকজন তোমাকে যা বলছে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। দ্বিতীয় এইচ হল হার্ড ওয়ার্ক, অর্থাৎ পরিশ্রম। তৃতীয় এইচ, যেটা সবচেয়ে জরুরি এবং প্রথম দুটোকে জোড়ে এবং এটা ছাড়া চলবে না, সেটা হল হিউমিলিটি। মানে বিনয়। দয়ালু হও, অন্যদের তাদের প্রয়োজনীয় সময়টুকু নিতে দাও। বাকি দুটো এইচ হল হার্ড ক্যাশ আর হিউমার। অর্থাৎ নগদ টাকা আর রসবোধ। রসবোধ ছাড়া বাঁচতে পারবে না। মাত্র ১,১০০ লোকের টিম হওয়া সত্ত্বেও আমরা উল্লেখযোগ্য রেভিনিউ মাইলফলকে পৌঁছেছি। আমরা ভারতের কনিষ্ঠতম স্টার্টআপ ছিলাম যারা ৮ মাসে ২০০ কোটি টাকা তুলেছিল, ২১ মাসে ২০০০ কোটি এবং ৪৬ মাসে ১০,০০০ কোটি। গতবছর আমরা প্রায় ১৯,০০০ কোটি টাকার রেভিনিউ তুলতে পেরেছি।”
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে ডঃ স্বাতী জৈন, ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ অ্যানালিটিক্স অ্যাট ইএক্সএল বললেন “আগামী দুবছরে তোমরা এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে পারো এবং অন্যদের তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে আরও গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারো। নিজের কাজের ক্ষেত্রটায় একটা ভাল নেটওয়ার্ক তৈরি করো, বিশেষ করে লিঙ্কডইনে, যাতে আপডেটেড থাকতে পারো। আমি তোমাদের সকলকে বলব, সৃজনশীল হও, সচেতন হও আর সহকর্মীদের সাহায্য করো। এটা এমন একটা জিনিস যেটা ভবিষ্যতে তোমাদের কাজে লাগবে। তোমাদের নজর যেন শুধু ব্যবসায় নয় মানুষের উপরেও থাকে।”
এই উপলক্ষে ডিরেক্টর অধ্যাপক কুলভূষণ বালুনি বলেন “আজ আমরা আইআইএম কাশীপুরের ছোট্ট ইতিহাসে একটা নতুন মাইলফলকে পৌঁছলাম। এবারের ব্যাচ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ব্যাচ। গত বছরের ৩২০ জন ছাত্রছাত্রীর থেকে এবছর ব্যাচ ৪৯০ জনের করে দেওয়ার ফলে আমাদের ভর্তি নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় প্রথম প্রজন্মের আইআইএমগুলোর সমান হয়ে গেল।” তিনি আলাদা করে উল্লেখ করেন “যেখানে প্রথম প্রজন্মের আইআইএমগুলোর এই স্তরে পৌঁছতে বহুবছর লেগেছে, আইআইএম কাশীপুর ১২ বছরেই সেখানে পৌঁছে গেছে।”
ছাত্রছাত্রীদের ডিরেক্টর বলেন “মাত্র দিন দুয়েক হিমালয়ে থেকেও তোমরা অনেককিছু শিখতে পারো। সঠিকভাবেই বলা হয় ‘Blessed are they who see beautiful things in humble places, where other people see nothing.’”
তিনি ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করেন এবং বলেন “শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবশ্যই প্রশ্ন করবে। ওটা যেমন তোমাদের ক্ষমতায়ন করে, তেমনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও ক্ষমতায়ন করে।” তিনি এও বলেন যে এটাই হয়ত কর্পোরেট জগতে যাত্রা শুরু করার আগে প্রশ্ন করার শেষ সুযোগ।
অধ্যাপক মালা শ্রীবাস্তব, ডিন অফ অ্যাকাডেমিক্স অ্যাট আইআইএম কাশীপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কাশীপুরে ২ বছরের এমবিএ পাঠক্রমের নতুন ব্যাচকে অভিনন্দন জানান। তিনি ছাত্রছাত্রীদের অসংখ্য অবয়বহীন মানুষ, যাঁরা তাঁদের এখানে পৌঁছতে সাহায্য করেছেন তাঁদের কথা মনে রাখতে বলেন। “তাঁরা সবাই তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন, যাতে একদিন বলতে পারেন যে এই ছাত্র বা ছাত্রীকে আমি পড়িয়েছিলাম বা ওই ছাত্রছাত্রীদের আমি সাহায্য করেছিলাম বা ও আমার বন্ধু ছিল। অতএব এমনভাবে সফল হও যাতে আমরা সবাই একদিন এই কথা বলতে পারি।”
অধ্যাপক কুমকুম ভারতী, চেয়ারপার্সন, এমবিএ প্রোগ্রাম অ্যাট আইআইএম কাশীপুর এমবিএ স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। তিনি ২০২৩-২৫ ক্লাসকে এতদূর আসার জন্য যে দৃঢ়তা, একনিষ্ঠতা এবং পরিশ্রম করার মত গুণ দেখাতে হয়েছে তার জন্য প্রশংসা করেন এবং আইআইএম কাশীপুরে তাদের যাত্রা শুরু করার জন্য এইসব গুণের গুরুত্ব বিশেষ করে উল্লেখ করেন। নিজের লক্ষ্যপূরণ করার এবং স্বপ্ন সফল করার গুরুত্বের উপর তিনি জোর দেন, যেহেতু এতে অর্থনীতি পুষ্ট হয় এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ আরও উন্নত হয়।

Post a Comment

0 Comments