পাঁচ বছর বয়সী গীতাঞ্জলি এখন সুস্থ




ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ২৬ শে ফেব্রুয়ারি: ঝাড়খণ্ডের গিরিডির বাসিন্দা  একটি দুর্ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী গীতাঞ্জলির জীবন মুহূর্তে যেন বদলে গিয়েছিল। গত ২৫ শে ডিসেম্বর,  বাইকে যাওয়ার সময় ছোট্ট গীতাঞ্জলির অ্যাকসিডেন্ট হয়। একটি ট্রাক বাইকটিকে ধাক্কা মারে। এর ফলে গীতাঞ্জলি ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তার আরেক দিকে। মুখের মধ্যে অনেকটা আঘাত লাগে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় যেখানে দ্রুত রিসাসিয়েট করার পদ্ধতি শুরু হয়। গীতাঞ্জলির যে স্পেশালাইজড চিকিৎসার প্রয়োজন, এটা বুঝে তাকে ২৬ শে ডিসেম্বর মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে আনা হয়, যেটি পূর্ব ভারতের অন্যতম সবচেয়ে প্রাইভেট হসপিটাল চেন। গীতাঞ্জলি ভর্তি হয় ডা. অখিলেশ কুমার আগরওয়ালের অধীনে, যিনি কনসালটেন্ট, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে। ছোট্ট গীতাঞ্জলির বেশ কিছু অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পুরোদস্তুর ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন করা হয় দুই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের। তারপর পাঁচ সপ্তাহ ধরে তার রিহ্যাব চলে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সব বাধা বিপত্তি এড়িয়ে তার লড়াই সত্যি অসাধারণ। এই পুরো প্রক্রিয়া করেন ডা. আগরওয়াল এবং তার টিম, যার মধ্যে ছিলেন ডা.  নিকোলা জুডিথ ফ্লীন, এমডি, বিভাগীয় প্রধান - পেডিয়াট্রিকস এবং নিওনাটোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি এবং ডা.  সুনন্দন বসু, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন সার্জেন, মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজিজেস ( মাইন্ড)। আজকের  সম্মেলনে বাকিদের সাথে উপস্থিত ছিলেন অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ,ডাঃ অমিয় কুমার মিশ্র, সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং এইচওডি, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগ, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল |

গীতাঞ্জলির অভিভাবকদের জন্য পুরো বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না, বরং অনিশ্চয়তা ছিল। গীতাঞ্জলির বাবা বিকাশ গুপ্তা, সাধারণ একটি হকার এবং তার মা পাম্মি দেবী সাধারণ গৃহবধূ। অস্ত্রোপচারের জন্য অর্থ সংস্থান করা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। মেডিকাতে তারা যে শুধুমাত্র চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন এমন না, তার সাথে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট তাদের পাশে থেকেছে কিভাবে পরিস্থিতির সমাধান করা যেতে পারে। অ্যাক্সিডেন্টের জন্য গীতাঞ্জলির মুখের হাড় থেকে টিস্যু আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তবে বয়স মাত্র পাঁচ হলেও গীতাঞ্জলি এই ট্রমা কাটিয়ে ওঠে, বিশেষ করে যেভাবে তার মুখের ডান দিক, চামড়া, চোখের মণি আর নাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।গীতাঞ্জলির ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন করা হয়। পাঁচ সপ্তাহ ধরে পুরো রিহ্যাব চলে। অস্ত্রোপচারের পর পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়। বর্তমানে চোখ খোলা আর বন্ধ করতে পারছে গীতাঞ্জলি। এছাড়া নাকের অংশটি সাফল্যের সাথে পুরো ঠিক করা গিয়েছে, যা তার বাবা মায়ের কাছে খুব চিন্তার ছিল। 

ডা. অখিলেশ কুমার আগরওয়াল পুরো পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে জানান,"যখন গীতাঞ্জলিকে তড়িঘড়ি হসপিটালে আনা হয় ভর্তি করার জন্য, তখন সে ভীষণ ট্রমার মধ্যে ছিল। তবে ওই কঠিন অবস্থার মধ্যে গীতাঞ্জলির সাহস আমাদের আশার আলো দেখিয়েছিল। সামগ্রিক চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম একটি দিক ছিল তার দৃষ্টিশক্তি বাঁচানোর দিকটি। তবে বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না কারোর তার চোখের সকেটে ছিদ্র তৈরি হয়েছিল। তবে দ্রুত অস্ত্রোপচারের দিকটি সহজ ছিল, কারণ তাতে অনেকক্ষণ চোখ খুলে রাখতে হবে এবং বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে ভাগ্যক্রমে, সময়মত চিকিৎসা শুরু করে, গীতাঞ্জলি চোখ খুলে রাখতে পারে এবং তার দৃষ্টি ঠিক থাকে। গত মাসে হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, গীতাঞ্জলি নিয়মিত চেকআপের মধ্যে রয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি নজরে রাখছি এবং যে কোন সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হলেই সেটি খতিয়ে দেখছি। "

Post a Comment

0 Comments