কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চ্যাম্পিয়ন্স মিট আয়োজনে মেডিকা


 

ওয়েব ডেস্ক; ১৪ই মার্চ, কলকাতা: এই বছর বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষ্যে গত ১২ ই মার্চ, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল তাদের মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে আয়োজন করেছিল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চ্যাম্পিয়ন্স মিট। এই আয়োজনের অন্যতম উপলক্ষ্য ছিল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল বিষয় নিয়ে তুলে ধরার উপস্থিত সকলের মধ্যে। 

আলোচনায় ছিলেন (প্রফেসর) ডঃ দিলীপ কুমার পাহাড়ি, নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট, নেফ্রোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। এছাড়া ছিলেন ডঃ রোহিত রুংতা, কনসালটেন্ট নেফ্রোলজিস্ট এবং রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট ফিজিশিয়ান, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। এনারা বিভিন্ন বিভ্রান্তি দূর করেন, দরকারি তথ্য জানান এবং নেফ্রোলজিকাল ইস্যুর দিকগুলো তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠানে ১৫ জন মানুষের জীবনের কাহিনী তুলে ধরা হয় যারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার পর স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। 
এই অনুষ্ঠানে যেই আলোচনা হয়, তা মানুষকে ক্লিনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অবহিত করেন, যেখানে কিডনির সমস্যার উপসর্গ থেকে পুরোদস্তুর ভালো থাকার দিকটি ছিল। 

নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে ৫৭ বছর বয়সী শিক্ষাজগতের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত বসিরহাটের ছবি সাহা জানান," শিক্ষা ক্ষেত্রে আমার জীবন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস শিখিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা। দুটো কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার পর আমি আরো লড়াকু হই আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের তাৎপর্য উপলব্ধি করি। 
১৯৯৬ সালে ডঃ দিলীপ কুমার পাহাড়ির তত্বাবধানে আমার প্রথম কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়। আমি ওনার প্রথম দিকের ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার ক্ষেত্রে রোগী ছিলাম। ২০১৪ সালে মেডিকায় আমার দ্বিতীয় কিডনির ট্রান্সপ্লান্ট হয়। আমি ডঃ পাহাড়ি এবং তার টিমের কাছে খুব কৃতজ্ঞ এবং বিশেষ করে মেডিকা পরিবারের কাছে, তাদের অবদানের জন্য, বিশেষ করে যেভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নিয়মিত চেক আপের মধ্যে থেকে আর সংযত জীবনযাপন করে আজ আমি ভালো আছি আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। এখন আমি সত্যি খুব কৃতজ্ঞ জীবনের কাছে।" 

 আরেকজন যিনি পেয়েছেন, প্রবাল কুমার। ৬৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার, বর্তমানে নিউটাউন বাসী জানান," ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমার কিডনি ফেলার দিকটি নজরে আসে। ডঃ পাহাড়ির তত্বাবধানে আমার একটি সফল ট্রান্সপ্লান্ট অস্ত্রোপচার হয়। বর্তমানে আমি চার মাস অন্তর চেক আপ করাই। এখন আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করি। আমি যখন কিডনি ফেলার বিষয়টি জেনেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল যে পৃথিবী শেষ হয়ে গেল আমার। যেভাবে ডঃ পাহাড়ি এবং তার টিম আমার কাউন্সেলিং করেন, তাতে আমি আমার ভয় জয় করি এবং চ্যালেঞ্জকে সামনের লড়াই করার সাহস আনি নিজের মধ্যে। এর ফলে আমি ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতির মধ্যে এগিয়ে পারি এবং এখনও পর্যন্ত আমি স্বাভাবিক জীবন পালন করে রয়েছি।  

লেক গার্ডেন নিবাসী ৭৪ বছর বয়সী সরলা লাখটিয়া নিজের জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন," ২০০৭ সালে, আমার কিডনি ফেল করার বিষয়টি ধরা পড়ে। এই দুঃখের খবরটি জেনে আমি ডঃ পাহাড়ির মতামত নিই। উনি আমায় জানান যে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার সুযোগ রয়েছে। সেই হলে আমি সুস্থ হয়ে যাব এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব। আমার সেই বছরই কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়। সেই সময় থেকেই আমি চার মাস অন্তর অন্তর ডঃ পাহাড়ির তত্বাবধানে চেক আপে রয়েছি। আমি এবং আমার পরিবার ওনার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ আমাকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য। কিডনি বিকল হওয়ার মত মারাত্মক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওনার সাহায্য কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।   

প্রফেসর) ডঃ দিলীপ কুমার পাহাড়ি জানান," কিডনি ফেল হওয়ার ঘটনায়, আমরা এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যখন কিডনির ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার দিকটি আটকানো মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। এই সময়ের দুই ধরনের রাস্তা বা পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে চলার সুযোগ থাকে, ডায়ালিসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। ডায়ালিসিস অনেকের ক্ষেত্রেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকলেও, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অনেক ভালো জীবন দিতে পারে এবং অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সফল হলে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি হতে পারে এবং কিডনির অসুখের আগের পরিস্থিতির দিকে এগোতে পারি। পুরো পরিস্থিতির সম্ভাবনা না কমলেও, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অনেক সমস্যা দূরে করতে পারে। তবে জেনে রাখা দরকার যে এই অস্ত্রোপচারের সাথে কিছু ঝুঁকি রয়েছে এবং জীবন ব্যাপী ওষুধ খাওয়ার দিকটি আছে। যেহেতু কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার দিকটি নিয়ে অনেক চাহিদা রয়েছে, তাই সাধারণ মানুষের উচিত মৃত্যুর পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দানের বিষয়ে আরো এগিয়ে আসা। একজনের অঙ্গ আরেকজনকে দিয়ে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। তাই মানুষের মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতা জরুরি।"

Post a Comment

0 Comments