ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ২৯ মার্চ : অসাধারণ কমিউনিটি স্পিরিট দেখিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২০ পড়ুয়া ব্লাড ক্যানসার ও ব্লাড ডিসঅর্ডার যেমন থ্যালাসেমিয়া ও অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দ্বিতীয় জীবন দিতে তাদের সমর্থনের অঙ্গীকার করেছে। এসব পড়ুয়ারা সম্ভাব্য স্টেম সেল ডোনার হিসেবে রেজিস্টার করেছে ডিএমকেএস-বিএমএসটি ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া পরিচালিত অভিযানে।
ব্লাড ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ছে এমন একটি অসরকারি সংগঠন ডিএমকেএস-বিএমএসটি ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া জোট বেঁধেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্টেম সেল ডোনার রেজিস্ট্রেশন উদ্যোগে এই বিদ্যায়তনিক সংস্থার বার্ষিক টেকনো-ম্যানেজমেন্ট উৎসব, ‘ফেটসু উপস্থাপন করছে সৃজন’, চলার সময়। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ব্লাড ক্যানসার ও স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পর্কে সচেতনতার প্রসার এবং এই কারণের জন্য যুবদের এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা।
সৃজন২৪ এর অফিসিয়াল সামাজিক উদ্যোগ পার্টনার রূপে ডিএমকেএস-বিএমএসটি এই সুযোগ গ্রহণ করছে পড়ুয়াদের জড়িত করতে স্টেম সেল ডোনার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে।
ডিএমকেএস-বিএমএসটি ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার সিইও প্যাট্রিক পল গুরুত্ব দিয়েছেন দেশে ব্লাড সেল ডোনারদের সাংঘাতিক অভাব এর দিকে। তিনি বলেছেন, “আগ্রহী দাতাদের জন্য ব্লাড সেল ডোনেশনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তরুণরা এগিয়ে আসছে, আমরা ব্লাড ক্যানসার রোগীদের ম্যাচের জন্য অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারব। ব্লাড সেল ডোনার ম্যাচিঙের লভ্যতা এখনও ভারতীয় রোগীদের জন্য, যাদের জীবনদায়ী প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, তাৎপর্যপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ভারতে রয়েছে সর্বাধিক তরুণতম জনসংখ্যা, সেজন্য স্টেম সেল ডোনার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আরও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রেজিস্ট্রেশনে তাদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ সহায়তার দরকার এমন রোগীদের ম্যাচিং ডোনার খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।“
ভারতে এক বছরে ৭০,০০০ এর বেশি মানুষ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। একজন এইচএলএ-ম্যাচিং ডোনার থেকে একটি ব্লাড স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা। রোগীদের মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ তাদের পরিবার থেকে ম্যাচিং ডোনার পায়, যার অর্থ ৭০ শতাংশ থেকে যায় আত্মীয়তাহীন ডোনারের খোঁজে, যা পাওয়া যেতে পারে স্টেম সেল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে। নিজের গোষ্ঠীর মধ্যে ম্যাচিং ভারতীয় রোগীদের ম্যাচিং ডোনার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বৃদ্ধি করবে। প্রতি পাঁচ মিনিটে, ভারতে একজন নতুন ব্লাড ক্যানসার রোগী শনাক্ত হচ্ছে, যা ম্যাচিং ডোনারের সীমাবদ্ধ লভ্যতার জন্য যা চ্যালেঞ্জের বিষয়। গোটা বিশ্বে ৪১ মিলিয়ন ডলার থাকলেও ভারতীয়রা এর মধ্যে রয়েছে মাত্র ০.৬ মিলিয়ন, যা প্রমাণ করে তরুণদের রেজিস্টার করতে উৎসাহ জোগানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
২২-২৪ মার্চ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আয়োজিত হয়েছিল সৃজন২৪, তিনদিনের একটি টেকনো-ম্যানেজমেন্ট উৎসব। বিভিন্ন ধরনের ব্যাবসা ও ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ড, কোডিং চ্যালেঞ্জ, গেমিং একস্ট্রাভ্যাগেঞ্জা, ব্রেনস্টর্মিং সেশন এবং অন্যান্য ক্রিয়াকর্ম উৎসবের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছিল, যাতে ছিল ১০,০০০-এর বেশি দর্শক ও অংশগ্রহণকারী। এই ইভেন্টের বৈচিত্র্যময় ক্রিয়াকলাপ আকর্ষণ করেছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রের পড়ুয়াকে, যাতে ছিল উদ্ভাবন, যৈথতা ও সামাজিক দায়িত্বের পরিবেশ।
মেম্বারশিপ চেয়ার টিম এক্সএলআর ৮, ফেটসু প্রেজেন্টস সৃজন, অভ্রানুজ পোদ্দার বলেন, “ফেটসু প্রেজেন্টস সৃজন একটি বার্ষিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা উৎসব যা আয়োজন করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সৃজনের এই সংস্করণে, টিম এক্সএলআর ৮ সুযোগ পেয়েছিল ডিকেএমএস-বিএমএসটি ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধার এবং এই ইভেন্টে সহায়তার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। হাজার হাজার রোগীর জন্য স্টেম সেল ডোনেশনের ক্ষেত্রে তাদের কাজকর্ম সত্যিই অসাধারণ কৃতিত্ব। এরকম একটি মহৎ কারণের জন্য সচেতনতার প্রসারের সুযোগ পাওয়া হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ। আমরা সর্বান্তকরণে ডিকেএমএস-বিএমএসটিকে সমর্থন করি এবং আশা করি এই অসরকারি সংগঠনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে আমাদের ভূমিকা পালন করতে পারব।”
প্যাট্রিক পল আরো বল্লেন, “এই রেজিস্ট্রেশন উদ্যাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও এর পড়ুয়াদের আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। ডিকেএমএস-বিএমএসটি এরকম সচেতনতা প্রসার ও রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্পেন গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেবে, যেখানে প্রধানত গুরুত্ব দেওয়া হবে যুবদের। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় তাদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ যেসব রোগীর এই কারণে সহায়তা দরকার তাদের জন্য ম্যাচিং ডোনার পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।”
একজন সম্ভাব্য স্টেম সেল ডোনার হিসেবে রেজিস্টার করতে হলে আপনাকে স্বাস্থ্যবান ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে। যখন আপনি রেজিস্টার করতে তৈরি, আপনাকে একটি সম্মতিপত্র পূরণ করতে হবে এবং আপনার গলার ভেতর থেকে সোয়াব দিতে হবে আপনার টিস্যু সেল সংগ্রহের জন্য। তারপর আপনার টিস্যু নমুনা পাঠানো হবে ল্যাবরেটরিতে আপনার এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) বিশ্লেষণ করতে এবং তর্কহীনভাবে তালিকাভুক্ত করা হবে আন্তর্জাতিক সার্চ প্ল্যাটফর্মে ম্যাচিং স্টেম সেল ডোনারের জন্য।
0 Comments