ওয়েব ডেস্ক; ৮ মার্চ: শুক্রবার ৮ মার্চ শুক্রবার থেকে আগামী দুদিন রবিবার ১০ মার্চ পর্যন্ত কলকাতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৮ তম ‘International Conference on Recent Advances in Pain (ICRA Pain-2024)’, আয়োজনে দরদিয়া পেন ফাউন্ডাশন। এই সম্মেলনে দেশ বিদেশের প্রায় আড়াইশ ব্যথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যোগ দিয়েছেন।
এই সম্মেলনের মঞ্চে দেখা গেল সম্বলপুরের ডা. স্মৃতিরেখা হোতা, নেপালের ডা. শিরিশ অমাত্য, বাংলাদেশের ডা. কাওসার সর্দার, ডা.এ এইচ মিল্টন, মালেশিয়ার ডা. সি জে তোহা ও ডা. গোপীনাথ রাজু, সিঙ্গাপুরের ডা. ম্যাথু টাং বা ইরাকের ডা. সাবা আহমেদ এর মতো পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞদের। সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনায় এবং সংবাদ মাধ্যমের সামনে তাঁরা ব্যথার চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি তুলে ধরেন।
ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তো বটেই অনেক চিকিৎসকদের মধ্যেও সঠিক ধারণা নেই। পেন ম্যানেজমেন্টকে জনপ্রিয় করে তুলতে বহু বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন দরদিয়ার প্রাণপুরুষ ডা. গৌতম দাস। দীর্ঘদিন ধরে ডা. দাস ও তাঁর টিম ব্যথার চিকিৎসার পাশাপাশি দেশ বিদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
ডা. গৌতম দাস জানালেন ব্যথা আমরা সকলেই জীবনের কোন না কোন সময়ে ব্যথায় ভুগেছি। এর বাইরে ভারতবর্ষে ক্রনিক ব্যথার কষ্টে ভুগছেন মোট জনসংখ্যার ২২.৫% মানুষ। বিশ্বের কোনও কোনও দেশের ৪০ % পর্যন্ত মানুষ ক্রনিক ব্যথার শিকার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার প্রকোপ বাড়ে। হাঁটু, কোমর, কাঁধ, মেরুদণ্ড, মাইগ্রেন, ঘাড়, কাঁধ, হাত সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা তো আছেই সঙ্গে আছে ক্যানসারের অন্তিম পর্যায়ের ব্যথার মারাত্মক কষ্ট। ব্যথার ওষুধ সাময়িক ভাবে খাওয়া গেলেও এটি কোন সমাধান নয়। দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথার কষ্টের নিরাময় করা হচ্ছে ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্ট নামক বিশেষ চিকিৎসার সাহায্যে, এর সাহায্যে বেশিরভাগ ব্যথার উপশম করা হয় কোনও কাটা ছেঁড়া ছাড়াই। ক্রনিক ব্যথার পেছনে খুব যে মারাত্মক কোনও কারণ থাকে তা নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিজেনারেটিভ অর্থাৎ ক্ষয়জনিত কারণে ব্যথার সমস্যা হয়। অন্যদিকে টানা বসে কাজ, এক্সারসাইজের অভাবে ব্যথার সমস্যা বাড়ছে। বেশি বয়সে ব্যথার সমস্যা বাড়লেও অনেক সময় অল্প বয়স থেকেও ক্রনিক ব্যথা ভোগায় বলে জানালেন ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শুষ্পা দাস। ব্যথার কষ্ট কমাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যানালজেসিক ওষুধ আর সার্জারির সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু ডা. দাস জানালেন ইন্টারভেনশনাল পেন মানেজমেন্টের একটা অন্যতম দিক হল রিজেনারেশন থেরাপি। অর্থাৎ বয়স, খেলাধুলো ও অন্যান্য কারণে অস্থিসন্ধি, পেশি, টেন্ডন, লিগামেন্ট ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত বা ডিজেনারেটেড হলে রিজেনারেশন থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করলে রোগী দীর্ঘ দিন সুস্থ থাকেন।
ব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা. শুষ্পা দাস জানালেন স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে সাময়িক ভাবে ব্যথা কমানো হলেও রিজেনারেশন থেরাপি দিয়ে ব্যথা সারানোর পদ্ধতিটি অনেক বেশি কার্যকরী। ডা দাস জানালেন যে অস্থিসন্ধি ক্ষয়ে গেলে কিংবা পেশি, টেন্ডন, লিগামেন্ট চোট পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে রিজেনারেশন থেরাপি করে ক্ষতিপূরণ করা হয়। এই থেরাপিতে রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে প্লেটলেট আলাদা করা হয়। প্লেটলেটে আছে আলফা গ্র্যান্যুয়েলস নামে এক বিশেষ গ্রোথ ফ্যাক্টর। এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ফলে ব্যথা সেরে যায়। আলট্রাসাউন্ড গাইডেড এই থেরাপিতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশতে ওষুধ দেওয়ায় এই থেরাপি দ্রুত কার্যকর হয়। অতি সম্প্রতি আরও একটি অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে ইদানীং ব্যথা কমানো হচ্ছে, তা হল বোনম্যারো সেল থেরাপি। ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে আছে ওজোন নিউক্লিওলাইসিস, পিআরপি, সিলেকটিভ নার্ভ রুট ব্লক, পারকিউটেনিয়াস মাইক্রোডিসেক্টমি, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি নিউরোটমি সহ নানান পদ্ধতি। কোন রোগীর জন্য কি চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ভর করে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার ওপর। এগুলর সঙ্গে কিছু এক্সারসাইজ করা জরুরি। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে ব্যথার চিকিৎসায় ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টের নতুন নতুন দিক গুলি আলোচনা হয়।
0 Comments