১৬% কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের শিকার জানাচ্ছে CRISIL ও ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার সমীক্ষায়



ওয়েব ডেস্ক; ৭ মার্চ: ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া, CRISIL-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘উইমেন অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ শীর্ষক তাদের সার্বিক সমীক্ষার তিনটি রিপোর্টের দ্বিতীয়টি লঞ্চ করেছে। এই রিপোর্ট ভারতের ১০টি শহর জুড়ে ৮০০-র বেশি মাস মাইনে পাওয়া এবং স্বনিযুক্ত মহিলাকে নিয়ে করা হয়েছে। এই সমীক্ষা ডিজাইন করা হয়েছে তাঁদের পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার পছন্দগুলির আন্তঃসম্পর্ক উদ্ঘাটন করতে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত প্রথম অংশের কাজকে এগিয়ে নিয়ে এই দ্বিতীয় রিপোর্টে কর্মীবাহিনীতে মহিলাদের তুলনাহীন অবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান উপলব্ধি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অভ্যাস এবং তাঁরা যেসব বাধার সম্মুখীন হন সেইসব। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে বয়স, আয়, বৈবাহিক অবস্থান এবং স্থান মহিলাদের পছন্দকে প্রভাবিত করে।

কর্মীবাহিনীতে মাসিক মাইনে পাওয়া মহিলাদের গতিপ্রকৃতি এবং তাঁরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তা বোঝা
মাইনের পরিমাণ এবং কেরিয়ারের উন্নতি মাইনে পাওয়া ৬৯% মহিলার চাকরি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানতম বিষয় বলে দেখা গেছে। অন্যদিকে ৪২% স্বনিযুক্ত মহিলা স্বাধীনতা এবং কাজের সময়ের নমনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেন। এই উপলব্ধি নানারকম প্রয়োজন ও পছন্দকে জায়গা করে দিতে কর্মক্ষেত্রের নীতিগুলিকে বদলে নেওয়ার গুরুত্বকে চিহ্নিত করে। লক্ষণীয়, দূর থেকে কাজ করা মাইনে পাওয়া মহিলাদের অনেকের মধ্যেই অগ্রাধিকার পায় না। মাত্র ৩% মনে করেন এই সুযোগ অবশ্য প্রয়োজনীয়।

এই সমীক্ষার ফলাফল কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন লিঙ্গবৈষম্য আছে বলে যে ধারণা ইন্ডাস্ট্রিতে চালু, তাকেই প্রমাণ করে। এই রিপোর্টে উদ্ঘাটিত হয়েছে যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিকের ব্যবধান মাইনে পাওয়া মহিলাদের মধ্যে ২৩% বলে দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে বলে মনে করছেন ১৬%। মোটামুটি সচ্ছল মহিলা, যাঁরা বছরে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন, আর সচ্ছল মহিলা, যাঁরা বছরে ৪১ থেকে ৫৫ লাখ টাকা আয় করেন, তাঁদের লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিকের ব্যবধান সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি নানারকম। সচ্ছল মহিলারা বেশি ব্যবধান রয়েছে (৩০%) বলে মনে করেন, মোটামুটি সচ্ছল মহিলাদের মতে এই সংখ্যাটি ১৮%। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের প্রশ্নেও এই একই প্রবণতা দেখা গেছে। সচ্ছল মহিলাদের ৩০% বলেছেন তাঁদের বৈষম্যমূলক ব্যবহার পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই সংখ্যা মোটামুটি সচ্ছল মহিলাদের দলের থেকে অনেকটাই বেশি। তাঁদের ১২% এই ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মেট্রো শহরের ৪২% মাইনে পাওয়া মহিলা মাইনে নিয়ে দরাদরি করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। এই অভিজ্ঞতা ভারতের পূর্বাঞ্চল আর পশ্চিমাঞ্চলে আলাদা রকমের। কলকাতায় ৯৬% মাইনে পাওয়া মহিলার মাইনে নিয়ে দরাদরি করতে কোনো অসুবিধা হয় না, অন্যদিকে আমেদাবাদের মাত্র ৩৩% মহিলা তেমন মনে করেন। দক্ষিণ ভারতের মধ্যেও আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া গেছে। চেন্নাইতে ৭৭% মহিলার মাইনে নিয়ে দরাদরি করতে কোনো অসুবিধা হয় না, হায়দরাবাদে সেই সংখ্যা ৪১%।

কিশোর পোদুরি, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড কান্ট্রি হেড – এইচ আর, ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া বললেন “মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধিকার নিশ্চিত করতে কর্মীবাহিনীতে মহিলাদের অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া জরুরি। এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া উপলব্ধি সংগঠনগুলোকে মহিলাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও ভাল করে বুঝতে এবং তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের কৌশল তৈরি করার সুযোগ দেবে। এর ফলে মহিলাদের কেরিয়ার আরও তৃপ্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে, কর্মীবাহিনীতে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে এবং তাঁদের পক্ষে যতখানি অবদান রাখা সম্ভব সেই ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন “ডিবিএস হল এক অন্য ধরনের ব্যাঙ্ক এবং ‘উইমেন অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ সমীক্ষা হল তার নীতিরই সম্প্রসারণ। মহিলারা আমাদের বিশ্বব্যাপী কর্মীবাহিনীর অর্ধেক এবং ভারতে আমাদের কর্মীদের ৩০%। এই সমীক্ষার কিছু ফলাফলকে ব্যবহার করে আমরা তাঁদের বিচিত্র প্রয়োজন মেটাতে পারি এবং তাঁদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত – দুরকমভাবেই সাহায্য করতে পারি।”

Post a Comment

0 Comments