হাল ছেড়ো না বন্ধু' মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল অর্থো অঙ্ক ক্যান্সার জয়ীদের নিয়ে পালন করল হাড়ের ক্যান্সার সচেতনতা মাস





ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ২০ ই জুলাই: ক্যান্সারের প্রভাব গভীর এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব অনেকটাই। তবে অন্ধকারের মধ্যেও, মানুষ আশার আলো খোঁজে যেখানে এই লড়াইয়ের মধ্যে জেতার রসদ থাকতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রোগভোগের মধ্যে হাড়ের ক্যান্সার বেশ জটিল। হাড়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের শারীরিক অবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এগোতে হয়। এই রোগের অন্যতম একটি দিক হল, মানুষের শরীরের কাঠামো আক্রান্ত হয়, সার্বিক ভাবে দুর্বল করে দেয় কোন মানুষকে। তবে বিপদের মধ্যেও স্বাভাবিক জীবন যাপনের দিকটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ থাকে হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল আয়োজন করেছিল সত্যি অনুপ্রাণিত করার মত অনুষ্ঠান 'অর্থো ওঙ্ক চ্যাম্পিয়ন্স মিট' যার ট্যাগ লাইন ছিল - " হাল ছেড়ো না বন্ধু"। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল মানুষের মধ্যে আশা আর লড়াইয়ের পুঁজি তৈরি করা। এই আয়োজনে যোগদান করেছিলেন হাড়ের ক্যান্সার লড়াই করে জিতে আসা মানুষ এবং তাদের খেয়াল রাখা মানুষেরা। এই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন।নিকোলাস ফ্যাসিনো, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, অ্যালায়েন্স ফ্রানকয়েস দ্যু বেঙ্গলে। 
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পার্থ সরকার, চেয়ারম্যান, ক্যান্সার আওয়ারেনেস এবং প্রিভেনশন কমিটি, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ডিস্ট্রিক্ট ৩২৯১; স্বামী সুপর্ণানন্দ, সেক্রেটারি, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, গোলপার্ক; শ্রী শক্তি প্রসাদ মিশ্র, নিবেদিতা চেয়ার, সেন্টার ফর ইন্ডোলজিক্যাল স্টাডিজ এবং রিসার্চ, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, গোলপার্ক; স্বামী ধেয়ানন্দ, প্রিন্সিপাল, রামকৃষ্ণ মিশন শিম্পপথ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ডঃ কৌশিক নন্দী, কনসালটেন্ট - সার্জিক্যাল অঙ্কলজি (মাস্কুলোস্কেলেটাল), মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। 

ইন্ডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ভারতে প্রতি বছর ৪০০০ এর বেশি হাড়ের ক্যান্সারের ঘটনা দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে, হাড়ের ক্যান্সার সব ক্যান্সারের প্রায় ৫% এর বেশি দেখা গিয়েছে। যাতে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে জিতে আসা মানুষেরা একে অন্যের সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা আদান প্রদান করতে পারেন এবং অনুপ্রাণিত করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে একটি কমিউনিটি বানানো খুব কার্যকর হওয়ার ক্ষমতা রাখে। মেডিকা তাই হাড়ের ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা মানুষদের নিয়ে একটি সাপোর্টিভ নেটওয়ার্ক বানানোর উদ্দেশ্যে এই অর্থো অঙ্কো সারভাইবার মিত আয়োজন করেছিল। 

এই প্রসঙ্গে ডঃ কৌশিক নন্দী বলেন," হাড়ের ক্যান্সার বেশি চ্যালেঞ্জিং। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে হাড়ের ক্যান্সার খুব বিরল। তবে বাস্তবে এই ক্যান্সার বাস্তবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে হয়, যা বাচ্চাদের প্রভাবিত করে, আর কিছু ক্ষেত্রে বড়দেরও। প্রতিটা কেস আলাদা এবং প্রয়োজন হল পারসোনালিজড কেয়ার রাখা। আমাদের হসপিটালে আমরা স্পেশালাইজ করি অ্যাডভান্সড চিকিৎসায় যেখানে লিম্ব রিকভারী সার্জারি, যার লক্ষ্য হল জীবনের গুণগত মান উন্নত করা। আমরা আজকে শুনলাম সেই সব মানুষগুলোর কথা যার হাড়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জীবনযুদ্ধে সফল হয়েছেন। তাদের কথা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের এখানে বিশেষ টিম রয়েছে যারা আপ্রাণ কাজ করে চলে, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে যাদের এই লড়াইয়ের মধ্যেও মানুষ সাধারণ জীবনে ফিরতে পারে। দ্রুত ধরা পড়লে এবং সঠিক ইন্টারভেনশন হল, হাড়ের ক্যানসারকে ম্যানেজ করা অসম্ভবপর নয়। এর ফলে রোগীরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের কথা ভাবতেই পারেন।" 

২১ বছর বয়সী যুবক তন্ময় সরকার জানান," চার বছর আগে আমার যেই ধরনের হাড়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল ডান হাতের উপরের অংশে তার নাম হল কন্দ্রোসারকোমা (একটি বিরল প্রজাতির ক্যান্সার যা হাড়ের কাছের নরম টিস্যুতে হয়)। আমাকে ডাক্তাররা পরামর্শ দেন লিম্ব শ্যালভেজ সার্জারি করার জন্য, যেখানে আমার হাত অ্যামপুট বা বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না, আমার হাত বেঁচে যাবে। তার আমার হাড়ের একটি অংশ ব্যবহার করেন, যেখানে একটি অংশ ফ্রোজেন করে ক্যান্সার কোষগুলো মেরে ফেলেন। তারপর পুনরায় আমার হাত পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে দেন। সার্জারির পর আমি শেষ পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সার মুক্ত রয়েছি। আমি একদম সাধারণ জীবন যাপন করি। আমি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব আমাকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য।"

মনিমালা মন্ডল, ২২ বছর বয়সী মহিলা, তার নিজের কাহিনী শোনান। তিনি বলেন,"২০১৭ সালে আমার হাঁটুর জয়েন্ট হাড়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে।আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম এবং কোন রকম আশা দেখছিলাম না। কয়েক মাস পর, এখানে আমার লিম্ব রিকভারি সার্জারি হয়। এখন আমি পুরো সুস্থ এবং সাধারণ জীবন যাপনে ফিরে এসেছি। আমি এখানকার ডাক্তারদের কাছে খুব কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য আমি নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি এবং বর্তমানে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।" 

সৌমিতা হালদার তার কথা বলতে গিয়ে জানান," ২০০৫ সালে আমার যখন বারো বছর বয়স, তখন হাড়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। অন্য একটি হাসপাতালে আমার একটি সার্জারি হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল আমার পা বাদ যাওয়া থেকে বাঁচানো। ২০১৮ সালে আমি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে আসি কারণ কারণ আমি হাতে যে ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করি, তা কার্যকরী ছিল না। আমার হাত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এবং ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। ভাগ্যিস আমি সেই সময় ক্যান্সার মুক্ত ছিলাম। তাই আমার হাত ঠিক করা সম্ভবপর হয়েছিল। এর ফলে আমি।আবার পড়াশোনা শুরু করতে পারি এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করি। অতি সম্প্রতি আমার একটি শেষ সার্জারি হয় একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে, যার নাম মাইক্রো ভাস্কুলার সার্জারি। এটি বিশেষ ভাবে পারদর্শী সার্জনরা করে থাকেন হাড়ের ক্যান্সার ও প্লাস্টিক সার্জারিতে। আমার হাত পুরোপুরি পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে এটি শেষ ধাপ ছিল।বর্তমানে আমি আমার হাত স্বচ্ছন্দে ঘোরাতে পারি এবং দৈনন্দিন কাজ করার জন্য রিহ্যাবিলিটেশন শুরু করেছি।"

Post a Comment

0 Comments