মেডিকা সুপার স্পেশালিটি আয়োজন করল বিজয়ার : 'সাহসী এবং সুন্দর' মিট স্তন ক্যান্সার জয়ীদের নিয়ে




ওয়েব ডেস্ক; ২২ অক্টোবর কলকাতা: ব্রেস্ট ক্যান্সার মাস উদযাপনে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল আয়োজন করেছিল 'ব্রেস্ট ক্যান্সার চ্যাম্পিয়ন্স মিট' যেখানে সেই সমস্ত মানুষ যারা স্তনের ক্যান্সার জয়ী হয়েছেন বা সাহসের সাথে লড়াই করছেন, তাদের নিয়ে। এই সম্মেলনে ডঃ পূজা আগরওয়াল, কনসালটেন্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি (স্তনের অস্ত্রোপচার), মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল বিভিন্ন জরুরি তথ্য সবার সাথে শেয়ার করেন। তিনি জানান কি কি প্রাথমিক উপসর্গ থাকে এবং কখন মেডিক্যাল পরিষেবা প্রদান করা খুব প্রয়োজনীয়। এছাড়া তিনি জোর দেন সমাজের এবং পরিবারের তরফ থেকে সাপোর্টের দিকটি। এই বছর হু (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) এর তরফ থেকে থিম রয়েছে 'কেউ যেন একলা স্তন ক্যান্সারের মুখোমুখি না হয়'। অরুণিমা দত্ত, সাইকো - অঙ্কলজিস্ট, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালন করে । প্রায় ২৫ জন রোগী এবং ক্যান্সার জয়ী মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 

ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ২৫% থেকে ৩২% ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই স্তনের ক্যান্সার দেখা যায়। এই অক্টোবর মাস বেছে নেওয়া হয়েছে 'ব্রেস্ট ক্যান্সার আওয়ারনেস' মাস হিসেবে। এটি বার্ষিক ভাবে পালন করা হয় স্তনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে। এই মাস জুড়ে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কমিউনিটি সকলে এগিয়ে আসেন সেই সমস্ত হাজার হাজার স্মাতন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের জন্য সহমর্মিতা দেখিয়ে।  

এই আলোচনাকালীন ডঃ পূজা আগরওয়াল বলেন," স্তনের ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হল মেডিক্যাল পারদর্শিতার সাথে নিজের খেয়াল রাখার একটি মিশেল। তাই আমরা এখানে চেষ্টা করি পার্সোনালাইজড কেয়ারের সাথে সঠিন নিরীক্ষণ, স্টেজ নির্ধারণ করা এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা করি। প্রতিটি ধাপের ক্ষেত্রেই, তা অস্ত্রোপচার হোক বা থেরাপি, একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম থাকে, যারা সেরা ফলাফলের দিক অগ্রসর থাকে সব সময়। সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় রোগীর যোগদান, নিজের খেয়াল রাখা, প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন এবং ইমোশনাল সাপোর্ট যা ভালো জীবনের ক্ষেত্রে খুবই দরকারি। এই জীবন যাত্রায় পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুদের সাপোর্ট খুবই প্রয়োজনীয় কারণ এই লড়াই করতে গেলে মানসিক জোর খুবই দরকারী। এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে স্তনের ক্যান্সারের রোগীদের ৬১% এর মধ্যে এই রোগ অ্যাডভান্সড স্টেজে থাকে এবং ভারতে খুব কম মানুষই প্রাথমিক স্তরে আমাদের কাছে আসেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কারণ এবং সচেতনতার অভাব প্রধানত দায়ী এর জন্যে। এই জন্য আগে আগে ধরা পড়া খুব দরকারী এবং আমরা ৪০ ঊর্ধ্বের মহিলাদের পরামর্শ দিই প্রতি বছর একবার করে ম্যামোগ্রাম করানোর জন্য। এছাড়া কমবয়সীরা যেন নিয়মিত নিজেদের স্তনের পরীক্ষা করেন।"

নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে অরুণিমা দত্ত বলেন," আমরা আজকের অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছি বিজয়া - যেখানে আমরা উদযাপন করব সাহসী আর সুন্দরীদের, মহিলাদের শক্তিকে, যার দ্বারা জীবনে একাধিক ভূমিকা পালন করে থাকেন তারা এবং কখনও, এই চ্যালেঞ্জিং রোগের কারণে, রোগীর ভূমিকাও পালন করতে হয়। এই লড়াই কঠিন তবে মনের কাঠিন্য খুব দরকারী এবং বাইরের সাপোর্ট ও খুব প্রয়োজনীয় এই লড়াইয়ের জেতার জন্য, যা প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জোগায়। সমাজ অনেক সময়তেই নারীর সৌন্দর্য বলতে বোঝাতে চায় তার বাহ্যিক রূপ - তার চুল, তার দৈহিক রূপ - কিন্তু আসল সৌন্দর্য হল তার মনের জোর এবং সাহস, যার সাহায্যে জীবনের কঠিন সময় সে পার হতে পারে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই খুব কঠিন, এবং রোগীদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় হল তাদের শারীরিক দিকের সাথে মানসিক দিকের গুরুত্ব দেওয়া। আমরা খুবই খুশি এটা দেখে যে আরো রোগী এবং তাদের পরিবারেরা কাউন্সেলিং এবং ইমোশনাল সাপোর্টের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন। আমরা আশা রাখছি যে শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার দিকটির মত মানসিক দিক ও সমান গুরুত্ব পাবে।" 

এই আলোচনায় ৮৬ বছর বয়সী প্রৌঢ় অরুণা বসাক তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান," এই বছরের শুরুতে আমার স্তনের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। আমি ভেবেছিলাম আমার জীবন বুঝি শেষ হয়ে গেল। আমি স্তনে একটি মাংস পিন্ড বা দলা নিয়ে মেডিকাতে এসেছিলাম। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর স্তনের ক্যান্সার এর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল। যেহেতু আমার ছেলে ভারতের বাইরে থাকে, আমি খুবই ভীত ছিলাম। তবে এখানের টিম এবং ডঃ পূজা আগরওয়াল আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে আমি ঠিক থাকব থাকব। এরপর আমার অস্ত্রোপচার হল। ভগবানের আশীর্বাদে আমাকে অস্ত্রোপচারের পর আর কিছু করতে হয়নি এবং বর্তমানে আমি ভালো আছি। বর্তমানে আমি ডঃ আগরওয়ালের অধীনে নিয়মিত চেক আপের মধ্যে রয়েছি। অতি সম্প্রতি আমি পরিবারের সাথে দুর্গা পুজো পালন করেছি। আমি শুধু এইটুকুই বলতে চাই যে সঠিক সাপোর্ট সিস্টেম থাকলে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে, যত কঠিন হোক না কেন, এই রোগকে জয় করা যাবেই। সেরে ওঠার পর মনে হচ্ছে এটা যেন নতুন শুরু আমার জীবনে।" 

গৌরী ভট্টাচার্য, ৭৬ বছর বয়সী প্রৌঢ়, জানান," আমার এই বছর স্তনের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আমি মানসিক ভাবে শক্তিশালী কারণ আমি জানি আমাকে লড়াই করতে হবে। আমার স্বামী আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। যদিও আমি আমার বয়সের কথা ভেবে শঙ্কিত, তবু বলতে দ্বিধা নেই যে মেডিকাতে আমার চিকিৎসা খুবই ভালো হচ্ছে। আমি তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ আমাকে সেরা পরিষেবা দেওয়ার জন্য। বর্তমানে আমার হরমোনাল থেরাপি চলছে এবং রোজকার দৈনন্দিন জীবনে ফিরে এসেছি।" 

অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মেডিকা হসপিটাল ইস্ট, বলেন," স্তনের ক্যান্সার সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি হওয়া ক্যান্সারের অন্যতম। প্রতি বছর ২.৩ মিলিয়ন স্তন ক্যান্সারের কেস দেখতে পাওয়া যায়। ভাগ্যক্রমে এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সফলভাবে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে অনেক বেশি জোর দিতে হবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এর শনাক্তকরণ করা। আমি খুবই আপ্লুত দেখে যে এখানে অনেক মানুষের কথা শোনা গেল যারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হয়েছেন। তাদের এই সাফল্য আমাদের অনকোলজি বিভাগের দায়বদ্ধতার দিকটি তুলে ধরে। আমি আজকে উপস্থিত সকলের সুস্থ জীবন কামনা করি।"

Post a Comment

0 Comments