ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ১৬ ই নভেম্বর: মনিপাল হসপিটাল, আবারও ইতিহাস তৈরী করল ৭১ বছর বয়সী একজন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে ফিরিয়ে এনে কলকাতার মনিপাল ব্রডওয়ে ইউনিটে। এই রোগী এক্সট্রাকরপরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেসন (ইকমো) ইউনিটে ছিলেন, যেই ইউনিট কোভিড ১৯ এর সময় ৫০% এর বেশি সাফল্যের হার দেখেছিল। এই মিরাকেল সম্ভব হয়েছে যেই টিমের জন্য, সেটায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ডঃ সুশ্রুতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাগীয় প্রধান - আইসিইউ এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার, ডঃ রাজর্ষি রায়, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট, এবং একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি স্পেশালিস্ট প্যানেল, যার মধ্যে ছিলেন ডঃ শুভাশিস গাঙ্গুলি, কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন, ডঃ শুভাশিস রায় চৌধুরী, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, ডঃ রঞ্জন সরকার, সিনিয়র কনসালটেন্ট, নেফ্রোলজি, ডঃ দেবরাজ যশ, বিভাগীয় প্রধান - পালমনোলজি (রেসপিরেটরি এবং স্লিপ মেডিসিন), ডঃ অশোক ভার্মা, কার্ডিয়াক অ্যানস্থেটিস্ট; ডঃ সুজিত চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান - মেডিক্যাল গাস্ট্রোএনট্রোলজি, ডঃ কৌশিক দাস, কনসালটেন্ট - ইএনটি, হেড ও নেক সার্জন, ডঃ দেবায়ন তরফদার, কনসালটেন্ট - ইএনটি, ডঃ শুভ্র গাঙ্গুলি, কনসালটেন্ট - ইএনটি। এনারা একবারের জন্য চোখ সরাননি, নিজেদের সেরা দিয়েছেন এবং প্রতি মুহূর্ত নজরদারি করেছেন।এই টিম অনেক লড়াইয়ের পর রোগীকে ইকমো থেকে ফিরিয়ে আনেন গত পয়লা নভেম্বর, ট্রাকিওস্টমি করার পর ( অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গলায় একটি গর্ত তৈরি করা যাতে ফুসফুসে বাতাস পৌঁছনো যায়), যার সাথে রেসপিরেটরি সাহায্য এবং প্রমাণ ভিত্তিক ইন্টারভেনশনের পর সম্ভব হয়।
ডঃ অঞ্জন চ্যাটার্জি, ৭১ বছর বয়সী, ওবেস্ট্রিকস এবং গাইনিকোলজির বিশেষজ্ঞ এবং ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট, তাকে গত ২১ শে অক্টোবর ২০২৪, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়েতে এমারেজনসি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা খুবই সংকটজনক ছিল। তাকে অন্য হসপিটাল থেকে আনা হয় এবং ওনার প্রয়োজন ভয়ানক এআর ডিএস (ARDS) অর্থাৎ একিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম , নন ইনভেশিভ ভেন্টিলেশনের। পাঁচ দিন ধরে তিনি হাই গ্রেড জ্বরে ভুগছিলেন, যার ফলে ক্ষিদে কমে গিয়েছিল, মাথাব্যথা আর জয়েন্টের ব্যথা অনেক বেড়েছিল। এর আগের হাসপাতালে টেস্ট করে জানা যায় সম্ভবত প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি কিছু কার্ডিয়াক ইস্যুর সাথে। ভর্তি হওয়ার পর ডঃ চ্যাটার্জিকে সরাসরি শিফট করা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ারে এবং ওনাকে নন ইনভেষিভ ভেন্টিলেশনে (NIV) তে দেওয়া হয় যেহেতু হাইপোকসিয়া খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। অক্সিজেন স্যাচুরেশন উন্নতি না হওয়ায় তাকে ইনটিউবেট করা হয় এবং মেকানিকাল ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ডাক্তাররা এর মধ্যে চেষ্টা করেন প্রন ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করার।
পরিবারকে বিপদ ও সুবিধা সম্পর্কে অবগত করার পর গত ২৩ শে অক্টোবর টিম সিদ্ধান্ত নেয় ভেনো ভেনাস এক্সট্রাকরপরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেসন (ইকমো) পদ্ধতি প্রয়োগের, যা রেসপিরেটরি ফাংশন চালু রাখার ক্ষেত্রে শেষ উপায় ছিল। এরপর আইসিইউ থেকে এইচডিইউ, আর তারপর ওয়ার্ডে দেওয়া হয় রোগীকে। এরপর ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকলে ১৪ই নভেম্বর তাকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে পুরো মেডিক্যাল টিমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর রোগীর নিজের উদ্যমের জন্য।
ডঃ সুশ্রুতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাগীয় প্রধান - আইসিইউ এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার বলেন," ডঃ চ্যাটার্জিকে ভর্তি করা হয়েছিল ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া, যেটি সাধারণত খুব বিপজ্জনক রোগ নয়। তবে এই ক্ষেত্রে ওনার ভয়ানক জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি হল এআরডিএস (ARDS)।ভয়ানক এআরডিএস নিয়ে উন্নতি হচ্ছিল এবং ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তবে কোনভাবেই অক্সিজেন লেভেল এবং কার্বন ডাই অক্সাইড লেভেল ধরে রাখতে পারছিলেন না বিভিন্ন ভেন্টিলেশনের মোডে। শেষমেশ তাকে ইকমোতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় ১০ দিন মত ইকমোতে ছিলেন তিনি। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে সফল ভাবে ই ক মো আর ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছেন উনি। কোন মরণাপন্ন রোগীকে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরিয়ে আনার আনন্দ অন্যরকম। এছাড়া আমরা আরো বেশি খুশি কারণ শুরুর দিন থেকেই আমাদের হসপিটালের সাথে যুক্ত রয়েছেন উনি। তাই আমাদের এই ক্ষেত্রে পুরস্কার দ্বিগুণ হয়েছে, বিপদ থেকে একজনকে মুক্ত করা এবং একজন পুরনো সহকর্মীকে কাজের মধ্যে আবার ফিরে পাওয়া।"
ডঃ শুভাশিস গাঙ্গুলি, কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন,বলেন,"ডঃ অঞ্জন চ্যাটার্জির সেরে ওঠা অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে ইকমোর আধুনিক চিকিৎসার কতটা ক্ষমতা রয়েছে। এমনকি ম্যালেরিয়া থেকে হয়ে যাওয়া এআরডিএস (ARDS) এর মত বিরল ও জটিল রোগের ক্ষেত্রে খুব কমই ইকমোর প্রয়োজন হয়, এবং এই ক্ষেত্রে এটাই শেষ চেষ্টা ছিল, প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে। দ্রুত ভেন্টিলেশনের দিকটি বেছে নেওয়া এবং ইকমোর সাথে এগানো আর তারপর ট্রাকিয়োস্টমির দিকটি জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। সংক্রমণ আটকানোর জন্য নিরন্তর নজরদারি ও রক্তপাত আটকানোর জন্য প্রচেষ্টা আর তার সাথে ই ক মো থেকে ভেঙে না পড়া আর ডিক্যানুলেসন, সম্ভব হতো না যদি না আমাদের আইসিইউ ও ইকমো অপারেশনাল টিম না থাকলে। হাসি মুখে আজ ওনাকে ছাড়া পেতে দেখে এটাই মনে করায় যে মানুষের মনের জোর কতটা হতে পারে। এছাড়া এটি দেখিয়ে দিল যে আমাদের টিম কিভাবে তার পাশে থেকে লড়াই করল। খারাপ অবস্থা থেকে ফিরে এসে এই জেতা আমাদের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের একটি অনেক বড় জয় এবং প্রমাণ ভিত্তিক ইন্টারভেনশন এর একটি উদাহরণ যা আমাদের মনে থেকে হবে।"
ডঃ অঞ্জন চ্যাটার্জি, ৭১ বছর বয়সী রোগী জানান,"একদিন, আমার হঠাৎ জ্বর জ্বর মনে হচ্ছিল। আমি পরীক্ষা করাই আর সেটায় ধরা পড়ে ম্যালেরিয়া। প্রথমে আমি একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছিলাম না। আমি এরপর ডঃ শুভাশিস গাঙ্গুলির সাথে যোগাযোগ করার তারপর মনিপাল ব্রডওয়ের আইসিইউতে দ্রুত ভর্তি হয়ে যাই। এরপরের পাঁচ দিন কি হয়েছিল আমার খেয়ালই নেই। পরে আমি জানতে পারি যে আমকে ইকমো সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আমি গলায় কিছু একটা অনুভব করি, বুঝতে পারি যে ট্রাকিয়োস্টমি করা হয়েছে যেহেতু আমার ফুসফুস সঠিক ভাবে কাজ করছিল না। আমি এখন অনেকটাই ভালো আছি। আমি মনিপাল টিমের কাছে খুব কৃতজ্ঞ আমার পর্যাপ্ত যত্ন ও খেয়াল রাখার জন্য।
0 Comments