ওয়েব ডেস্ক; ২৫ শে ডিসেম্বর, কলকাতা: নিউরোলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার (এনএসআই) এর ৭২ তম বার্ষিক সম্মেলন এনসিকন (NSICON) শেষ হল একটি বিশেষ প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে, যেখানে অঙ্গদান নিয়ে আলোচনা হল। এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ডঃ দলজিৎ সিং, সভাপতি, এনএসআই (NSI), ডঃ মানস পানিগ্রাহী, ডঃ কৃশ শ্রীধর, সচিব, এনএসআই (NSI), ডঃ এল এন ত্রিপাঠি, কার্যনির্বাহী সচিব, এনসিকন (NSICON) ২০২৪ এবং ডঃ কৌশিক শীল, যুগ্ম সাংগঠনিক সচিব। এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গল এবং সোনারে। বলাই বাহুল্য, এই ইভেন্ট ছিল নিউরোসায়েন্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যাকাডেমিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, যা প্রায় তিন দশক পর কলকাতায় হল।
১৯ শে ডিসেম্বর থেকে ২২ শে ডিসেম্বর, এই চার দিন, ১৫০০ জনের বেশি নিউরোসার্জন, নিউরোলজিস্ট, নিউরো-প্যাথোলজিস্ট, নিউরো-রেডিওলজিস্ট, নিউরো-অ্যানেসথেটিস্ট, নিউরো নার্স এবং অন্যান্য নিউরো সায়েনস্টিস্ট এই কনফারেন্সে যোগদান করেন। এই ইভেন্টে ছিল বিভিন্ন কাটিং এজ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানসমূহ, হাতেকলমে ওয়ার্কশপ, সাংস্কৃতিক শোকেস, বিভিন্ন সেশন যেখানে সমসাময়িক মেডিক্যাল ও মেডিক্যালের বাইরের নিয়ে আলোচনা হয়। খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক ডেলিগেট তাদের বক্তব্য রাখেন এবং বিশেষ লেকচার দেন, যা এনসিকন (NSICON) কে একটি অত্যাধুনিক বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তুলে ধরে।
এনসিকন (NSICON) ২০২৪ এই বছর গতানুগতিক বৈজ্ঞানিক সেশনের বাইরে গিয়ে এই বছর অন্তর্ভুক্ত করেছিল জনস্বাস্থ্য এবং সাংস্কৃতিক হেরিটেজ সম্বলিত বিষয়। প্রি-কনফারেন্স ডে, অর্থাৎ ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৪, পাঁচটি হাতেকলমে ওয়ার্কশপ করানো হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ এবং বিআইএন, পার্ক ক্লিনিকে। এর লক্ষ্য ছিল জটিল নিউরোলজিক্যাল পরিস্থিতিতে কিভাবে অত্যাধুনিক চিকিৎসা করতে হবে। এক সেশনগুলোয় কমবয়সী বিশেষজ্ঞরা ক্যাডাভেরিক ও মডেল ভিত্তিক সিমুলেশন নিয়ে বাস্তব জ্ঞান ও কৌশল জানতে পারে।
এই কনফারেন্স জুড়ে উপস্থিত সকলকে ভারতের স্থানীয় এবং জাতীয় হেরিটেজ সম্বলিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। মেডিকেলের বাইরের মানুষদের এনে মেডিসিনে এথিকসের মত এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা ইভেন্টের গুরুত্ব, বৈচিত্র্য ও প্রভাব অনেকটাই বাড়িয়েছিল।
অনুষ্ঠানের শেষ দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অঙ্গদানের উপর প্যানেল আলোচনা, যা তুলে ধরেছিল প্রাণ বাঁচানোর মত মহানুভব একটি দিক। ভারতে স্রেফ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অভাবে রোজ ৬০০০ মানুষ মারা যান। এই আলোচনায় তুলে ধরায় যে সচেতনতা এবং যোগদান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া যারা এই প্যানেল আলোচনায় যোগদান করেছেন, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয় অঙ্গ দানের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে, অঙ্গ দানের মাপকাঠি এবং কি কি মিথ রয়েছে যার জন্য অনেকে অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন।
ডঃ এল এন ত্রিপাঠি, কার্যনির্বাহী সচিব, এনসিকন (NSICON) ২০২৪, জানান," এই বছরের এনসিকন (NSICON) সত্যি অনেক বড় ইভেন্ট ছিল, শুধু যে নিউরো সায়েন্স কমিউনিটির জন্য এমন নয়। সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু তুলে আলোচনা করা হয়। আমরা সাধারণ বৈজ্ঞানিক সেশনের বাইরে গিয়ে আলোচনা করি, যেখানে জন স্বাস্থ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মত বিষয় ছিল। প্যানেল আলোচনা শেষ হয় 'অঙ্গদান' বিষয় নিয়ে। আমরা এই বিষয় বেছে নিয়েছিলাম কারণ অঙ্গদান জীবনের একটি উপহার। বলাই বাহুল্য, আমাদের উচিত সমাজে অঙ্গদান নিয়ে যেই মিথ আছে, সেগুলো ভেঙে দেওয়া। এছাড়া আরো বেশি মানুষকে অঙ্গদানের জন্য এগিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা দেওয়া, যাতে আরও বেশি মানুষ অঙ্গ দান করেন। প্রতি ১৭ মিনিটে মানুষ মারা যাচ্ছেন অঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে না বলে। প্রতি ১৩ মিনিট কেউ না কেউ যুক্ত হচ্ছে ওয়েটিং লিস্টে। অঙ্গের সত্যি অনেক প্রয়োজন। একজন সাধারণ অঙ্গদাতা সাত জন অবধি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। আজকের সেশন শুধুমাত্র যে সচেতনতা মূলক একটি প্রয়াস তা নয়, একটি ধাপ এগানো পরিবর্তনের পথে, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"
0 Comments