ওয়েব ডেস্ক; কলকাতা, ৬ মার্চ : মণিপাল হাসপাতাল গ্রুপের অন্তর্গত মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল আজ এক বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনার আয়োজন করল, যার বিষয় ছিল ‘নিদ্রা স্বাস্থ্য’, আসন্ন বিশ্ব নিদ্রা দিবস (১৪ মার্চ ২০২৫)-কে উপলক্ষ করে। আলোচনায় বিশিষ্ট চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ছিলেন ডাঃ কুণাল সরকার (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র কার্ডিয়াক হার্ট সার্জন ও প্রধান, MICS), (প্রফ.) ডাঃ শুভঙ্কর চৌধুরী (পরিচালক, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগ), ডাঃ প্রদীপ্তা কুমার সেঠি (পরিচালক – গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ) এবং (প্রফ.) ডাঃ অনির্বাণ রায় (বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ)। আলোচনাটি দক্ষভাবে পরিচালনা করেন ডাঃ শাশ্বতী সেনগুপ্ত দত্ত ও ডাঃ সৌভিক রায় চৌধুরী (সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ENT ও স্লিপ অ্যাপনিয়া বিশেষজ্ঞ)।
ভাল ঘুম হল সুস্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি, তবুও আজকের দ্রুতগতির জীবনে এটি উপেক্ষিত হচ্ছে। এই বিশ্ব নিদ্রা দিবসে "Make Sleep Health a Priority" এই বার্তাকে সামনে রেখে আলোচনা করা হয় যে, নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম কোনও বিলাসিতা নয়, বরং শারীরিক, মানসিক ও আবেগিক সুস্থতার জন্য এক অপরিহার্য প্রয়োজন। অনিয়মিত ঘুম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে, মানসিক চাপ বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
ডাঃ শাশ্বতী সেনগুপ্ত দত্ত আলোচনার মাধ্যমে ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাধি, তার লক্ষণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের সচেতন করেন। তিনি বলেন, "ভাল স্বাস্থ্য শুরু হয় গুণমানপূর্ণ ঘুম থেকে, তবু অনেকে দীর্ঘদিনের নাক ডাকা, দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ভাব বা মনোযোগের অভাবের মতো লক্ষণগুলোকে অবহেলা করেন, যা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও অনিদ্রা থাকলে তা শারীরিক, আচরণগত ও সামাজিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শৈশব থেকেই সুস্থ ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার, তবে যেকোনও বয়সে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। যথাযথ সময়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
প্যানেল আলোচনায় চিকিৎসকরা ঘুমের গুরুত্ব এবং স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন:
ডাঃ কুণাল সরকার হৃদরোগ ও ঘুমের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, "অপর্যাপ্ত ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিনে ঘুমানো, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।"
(প্রফ.) ডাঃ শুভঙ্কর চৌধুরী ঘুমের অভাব এবং বিপাকীয় ব্যাধির সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে বলেন, "অনিদ্রার ফলে গ্লকোজ বিপাক ব্যাহত হয়, যা ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। সুস্থ বিপাকের জন্য পর্যাপ্ত ও সময়মতো ঘুম একান্ত প্রয়োজনীয়।"
ডাঃ প্রদীপ্তা কুমার সেঠি বলেন, "অনিয়মিত ঘুমের ফলে এসিডিটি, আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) এবং হজমের সমস্যা বাড়তে পারে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে হজমের কার্যকারিতা বজায় রাখা সম্ভব এবং স্ট্রেস-জনিত গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও প্রতিরোধ করা যায়।"
(প্রফ.) ডাঃ অনির্বাণ রায় ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, "ঘুম ও মানসিক স্থিতিশীলতা একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস মানসিক স্বচ্ছতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।"
ডাঃ সৌভিক রায় চৌধুরী দীর্ঘস্থায়ী ঘুমজনিত ব্যাধির মারাত্মক প্রভাব নিয়ে বলেন, "স্লিপ অ্যাপনিয়া ও ইনসমনিয়া দুটি গুরুতর সমস্যা, যা শুধু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণও হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বস রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন পুরুষ OSA (Obstructive Sleep Apnea) রোগীর বিপরীতে ৫০-৬০ জন নারীও এই সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে স্থূলতা, PCOS, মেনোপজ-পরবর্তী সময় বা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মধ্যে OSA-র ঝুঁকি বেশি থাকে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি দেখা যায়, যা হাইপারঅ্যাকটিভিটি, মনোযোগের অভাব, আচরণগত পরিবর্তন, পড়াশোনায় খারাপ ফলাফল এবং শারীরিক বৃদ্ধির সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে জীবনযাত্রার মান অনেকটাই উন্নত করা সম্ভব।"
প্যানেল আলোচনার বিষয়ে ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত (রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মণিপাল হাসপাতালস - ইস্ট) বলেন, "সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আজ আমাদের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত, যা মানুষকে সচেতন করবে এবং দীর্ঘস্থায়ী ঘুমজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে।"
এই প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে ঘুমের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা পুনরায় গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়।
0 Comments